মৃত্যু যন্ত্রনা সইতে সইতে অবশেষে মারা গেলেন মানিকগঞ্জের অগ্নিদগ্ধ সালমা

দগ্ধ
সালমা

পিবিএ, মানিকগঞ্জ: টানা ২৩দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের গৃহবধু সালমা বেগম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে দীর্ঘ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। সালমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

সালমার স্বামী কৃষক রুবেল মিয়া জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিয়ে সালমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরিয়েছে টানা ২৩দিন। চিকিৎসকরা তার শরীরের নিম্মাংশের পোড়া ৩০ ভাগের চিকিৎসা করছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে পারেনি। প্রতিদিন চিকিৎসাসেবায় মোটা অংকের টাকা খরচ করাও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র কিনতে না পারায় চিকিৎসাসেবা ব্যহত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। পোড়া ক্ষতের যন্ত্রনায় ধীরে ধীরে সালমা নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সালমার মরদেহ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে আনা হবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নিজ বাড়িতে মাটির চুলায় রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতার ফলে তার গায়ের কাপুড়ে আগুন লেগে যায়। তাৎক্ষনিক পরিবারের লোকজন তাকে গুরুতর অবস্থায় ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা সেখান থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে রেফার করে দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়, তার শরীরের নিচের অংশের ৩০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসায় থাকতে হবে। তবে চিকিৎসা খরচ অনেক টাকা ব্যয় করতে হবে। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৪০হাজার টাকা ব্যয় হবে। টানা ৫ দিন মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নিতে তার প্রায় ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে এই টাকা ব্যয় করেছেন। এখন আরো টাকা ব্যয় করার কোন উপায়ান্ত নেই। বাধ্য হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা বান ইউনিট থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে।
দরিদ্র কৃষক রুবেল মিয়ার চিকিৎসার সামর্থ না থাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসাসেবা দায়িত্ব নেয়া হয়। অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। পরে তাকে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধীরে ধীরে শারিরীক অবনতি হয়ে তিনি মারা যান।
পিবিএ/এমআইএম/জেডআই

আরও পড়ুন...