মুন্সিগঞ্জ জেলাসংলগ্ন চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত দুজন হলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ভাষানচর গ্রামের কামাল ফকিরের ছেলে রাসেল ফকির (৩০) ও চাঁদপুর মতলবের পশ্চিম হানির পাড় এলাকার আক্তার হোসেন খানের ছেলে রিফাত খান (২৯)।
আহত ব্যক্তির নাম আইয়ুব আলী। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় স্পিডবোটে ছিলেন রাসেল, রিফাত, আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন। সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ কয়েকটি স্পিডবোট তাঁদের স্পিডবোটের সামনে আসে। তাৎক্ষণিক রাসেলদের স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ওই দুর্বৃত্তরা। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদুর রহমান বলেন, রাত নয়টার দিকে তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন মৃত অবস্থায় ছিলেন। একজন খুব গুরুতর আহত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের সবার শরীরে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। এগুলো গুলি কি না, তা আপাতত বলা যাচ্ছে না। সুরতহাল শেষে বলা যাবে। আহত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বিল্লাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি চাঁদপুরে ঘটেছে। তাঁরা সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছেন। গুলিবিদ্ধ আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি পক্ষ বালু উত্তোলন করে আসছে। দুটি পক্ষই নৌ ডাকাত হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই এক পক্ষের লোকজন। ধারণা করা হচ্ছে, বালু উত্তোলনের দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
তবে নিহত রাসেল ফকির বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাঁর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, রাসেল বৃহস্পতিবার সারা দিন বাড়িতে থেকে মাছ ধরার জাল সেলাই করেছেন। সন্ধ্যার মাছ ধরার জন্য মেঘনা নদীতে গিয়েছিলেন। নদীতে কয়েকটি স্পিডবোটের বেপরোয়া যাওয়া–আসা দেখতে পান তাঁরা। সাড়ে সাতটার দিকে গোলাগুলির শব্দও পান। পরে তাঁরা জানতে পারেন রাসেলকে গুলি করা হয়েছে।
রাসেলের বাবা কামাল ফকির বলেন, ‘ডাকাতেরা গোলাগুলি করেছে। আমার ছেলে তাদের মধ্যে পড়ে মারা গেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’