পিবিএ,মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউপির (৭ নং ওয়ার্ড) লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের মেম্বর টুটুলের বিরুদ্ধে সরকারী ত্রাণের মাষ্টাররোল জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে অস্বচ্ছল,অসহায় , কর্মহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট মেম্বরের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসাধু মেম্বর টুটুল তার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে স্বজনপ্রীতি-আত্মীয়করণ করে অস¦চ্ছলদের বাদ দিয়ে স¦চ্ছলদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে চাউল আত্মসাত করেছেন। তালিভূক্ত উপকারভোগীদের চাউল না প্রদান করে জালিয়াতির মাধ্যমে সেই চাল আত্মসাত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে সকল ইউনিয়নে গরীব,দুঃস্থ অসহায় জন্য তালিকা প্রণয়ন করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। ৭ নং লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামে ১৪৮ জনের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উক্ত তালিকায় অনেক স¦চ্ছল ব্যক্তি যাদের পাকা বাড়ি, গাড়ি ও অনেক জমিজমা রয়েছে তাদের নামও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। চাউল বিতরণ শেষে মাত্র ৩১ জনের মাষ্টার রোল যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, লক্ষ্মীনারায়নপুর ধলা গ্রামের কাবাতুল্লাহর ছেলে কিবরিয়া (যার সিরিয়াল নং- ৫০৬), মৃত বাদল মন্ডলের ছেলে হেলাল (যার সিরিয়াল নং- ৫০৭),ফরমান মন্ডলের ছেলে নেহার (যার সিরিয়াল নং- ৫৩৮), একরামুলের ছেলে শাহজাহান (যার সিরিয়াল নং- ১৩৪) , মুনকের এর ছেলে লালচাঁদ (যার সিরিয়াল নং- ১২৪), আতিয়ারের ছেলে সোহেল (যার সিরিয়াল নং- ১২৯), আক্কাছ আলীর ছেলে জুবায়ের হোসেন, এরা কেউ চাউল উত্তোলন না করলেও মাষ্টার রোলে এদের টিপসহি বা স্বাক্ষর রয়েছে। এখানে প্রতীয়মান হয় যে, মেম্বর টুটুল পরিকল্পিতভাবে ভূয়া নাম তালিকাভুক্ত করে ত্রাণের চাউল আত্মসাত করেছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে উপকার ভোগীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিলে তারা জানাই আমরা ত্রাণের চাউল পাইনি। শুনছি মেম্বর টুটুল তার নিজস্ব লোক দিয়ে টিপসহি দিয়ে চাউল উত্তালন করেছেন।
ধলা গ্রামের সাবেক মেম্বর ও উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানসহ গ্রামের অনেকেই অভিযোগ তুলে জানান, টুটুল মেম্বর ভূয়া তালিকা করে শুধু চাল আত্মসাত করেনি। সরকারীভাবে ভর্তূকির সার , বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ইত্যাদি কার্ড বিতরণেও অনেক টাকা পয়সা নিয়েছেন। ত্রাণের তালিকা সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করলে আরও অনেক ভূয়া নাম পাওয়া যাবে বলে তিনি পুণরায় যাচাই করার আবেদন জানান।
এনিয়ে অভিযুক্ত মেম্বর টুটুলের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তালিকানুযায়ী সকলেই চাল গ্রহণ করেছে। আমার কাছে চাউল বিতরণের ভিডিও রয়েছে। আমি সব দেখাতে পারবো। অভিযোগ খন্ডনে তিনি বলেন, কিবরিয়ার চাউল পরিবর্তে তার ভাই বকর উত্তোলন করেছে।হেলালের পরিবর্তে তার ছোট মা মিনা উত্তোলন করেছে। শাহজাহানের নামের তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া জুবায়ের ও লালচাঁদের নাম কোন তালিকাতে নেই। এদের নাম পরিবর্তন করে অন্যদের দেয়া হয়েছে। তবে মাষ্টার রোলে তাদের টিপসহি কিভাবে দেয়া হলো এর জবাব তিনি দেননি।
এব্যাপারে কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা জানান, আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ত্রাণের মালামাল বিতরণ করেছ্।ি মানুষ ভূলের উর্দ্ধে নয়। দু’একটি ভূল হতেই পারে। তালিকাভূক্ত একজনের ত্রাণ তার নিকটাত্মীয় তার ভাই, মা, বোন নিয়ে যেতে পারে। দু’জন ট্যাগ অফিসারের সাক্ষাতে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া তালিকার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে চেয়ারম্যান আরও বলেন, একজনের পাকা বাড়ি রয়েছে কিন্তু কর্মহীন হয়ে পড়ায় তার পরিবারে খাবার নেই। সে ক্ষেত্রে তার নামটা দেয়া হয়েছে। এটা অপরাধের কিছু না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট মেম্বরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গ্রামে প্রতিপক্ষ থাকে। আপনারা জাতির বিবেক,মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে যেন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, ত্রাণ বিতরণে কোনরকম অনিয়ম করা যাবে না। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যস্থা নেয়া হবে।
পিবিএ/সাহাজুল সাজু/এএম