মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে তিস্তা চুক্তিতে আর মমতা বাধা থাকবেনা

 

ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের মাঝে পথে কাঁটার মতো গেঁথে আছে তিস্তা চুক্তি

পিবিএ,ঢাকা: ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের মাঝে পথে কাঁটার মতো বিধেঁ আছে তিস্তা চুক্তি। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যতবারই বৈঠক হয়েছে ততবারই অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে এ তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অনড় অবস্থানের কারণে চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গে এতদিন বিজেপির পায়ের নীচে মাটি ছিল না, ফলে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বেশ জোরাজুরিও করতে পারেনি। রাজ্যের ৪২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আগে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। তবে এবার তারা মাত্র ২২টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে মাত্র দুটি আসন থেকে এবার ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। ফলে রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলের মোকাবেলা করার শক্তি ও মনোবল বেড়েছে।

এদিকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মোদি ক্ষমতায় আসায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকারও। গত পাঁচ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক দৃঢ় করতে চেষ্টার কমতি করেননি মোদি। মনে করা হচ্ছে, তিস্তা ইস্যুটিকে এবার অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি দিল্লি-ঢাকা সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তির বিষয়ে একটা ঘরোয়া রাজনৈতিক ঐকমত্য গত পাঁচ বছরে তৈরি হয়েই ছিল। এবার সেটার বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করছেন উভয় দেশের কূটনীতিকরা।

এদিকে বিদেশ সফরে থাকায় মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। তবে ঢাকা ফেরার পথে ৮ জুন দিল্লি গিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে কথা বলবেন।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি সম্প্রতি বলেছেন, ‘এর মধ্যে দুটো কথা আছে। প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট, যেটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্ন, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য শেখ হাসিনার হাত শক্ত করতেই হবে দিল্লিকে।’

অধ্যাপক লাহিড়ি বলেন, ‘ভারতে এখন যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো- তিস্তা চুক্তির দ্রুত সমাধান এবং তা স্বাক্ষর করা। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আটকে রেখেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বার বার এই চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু এখনো এ চুক্তির বিষয়ে অপেক্ষা করে আছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ সরকার দেশের মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে ভারত একটি প্রকৃত বন্ধু রাষ্ট্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেভাবে একটা পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে, তাতে ২০২১-এর মধ্যে রাজ্যে বর্তমানে যে সরকার আছে, তা থাকবে না। যদি না থাকে, তাহলে আমার মনে হয়, তিস্তা চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরিত হবে। কারণ, আঞ্চলিক স্তরে তো একটা সরকার চলতে পারে না। আরও একটা কথা, পশ্চিমবঙ্গ একটা সীমান্ত রাজ্য, যার সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা আছে। কাজেই রাজ্য সরকারের দুটো দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল। একটা রাজ্যের আঞ্চলিক বিষয়, অন্যটি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক মজবুত করা। কাজেই আগামী দুই বছর হয়তো দিল্লি ও ঢাকাকে অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চাপে তিস্তা চুক্তি শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে ।’

পিবিএ/এইচটি

আরও পড়ুন...