
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়াল ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, ধর্ষণ, অপহরণ, কিশোর গ্যাং ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক খুন, হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। বিগত সময়ে কতিপয় সন্ত্রাসী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। উক্ত ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’ এর প্রধান মোঃ আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ার (৩৬)’কে কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে ও তার ০২ সহযোগী মোঃ ইমন (২০) এবং মোঃ ফরিদ (২৭)’দ্বয়কে আদাবর হতে গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ) অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র সামুরাই ০১টি, ছুরি ০২টি, গাঁজা ০৮ কেজি, ০১ টি প্রাইভেট কার ও ০১টি হাত ঘড়ি।
গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র মামলা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাসহ বিভিন্ন আইনে অসংখ্য মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোঃ আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিগত ২০০৫ সালে আনোয়ার জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা হতে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করত। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু করলেও বিগত ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জিকাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং উক্ত কজ্বি কাটা ভিডিওটি টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনায় আনোয়ার ও তার সহযোগীদের কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে বিষয়টি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগ্নে বিল্লালসহ আরো অনেকে গ্রেফতার হলে আনোয়ার নিজের পূর্বের লেবাস পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থেকে কব্জিকাটা গ্রুপের নামে দুর্র্ধষ এক বাহিনী গড়ে তোলে। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবী নগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরে কব্জিকাটা আনোয়ার গ্রুপ বাহিনী। এছাড়াও নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজস্ব দলের ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ জগৎ থেকে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে উঠে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় অত্যন্ত সুকৌশলে বার বার সে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কব্জিকাটা আনোয়ার বাহিনী প্রথমে যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে। গ্রুপ সদস্যরা রাস্তায় যানজট তৈরি করে, সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর ও নজর রাখে, রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করে। আইন শৃংখলা বাহিনী বা সাধারণ জনগন বাধা দিচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখে। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের হাতেই ৭/৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেন না অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখায় আনোয়ারের কব্জিকাটা গ্রুপের সদস্যরা। আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রথম আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে আদাবর থানায় মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, মারপিট, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে অসংখ্য মামলা হলেও জামিনে মুক্ত হয়েই সে পুনরায় অন্ধকার জগতে ফিরে আসে এবং পূর্বের তুলনায় অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েও সে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে তার অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। ধৃত আসামির থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাই বাচাই করে ভবিষ্যতে র্যাব-২ কব্জিকাটা গ্রুপের বাকী সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রাখবে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।