মৎস্যজীবী সমিতি নিয়ে সমবায় কর্মকর্তার বাণিজ্য

পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সরকারি জলমহাল ও খাস পুকুর লীজ পেতে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মৎস্যজীবি সেজে স্মার্ট কার্ড তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন নামে মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি গঠনের পর বাগিয়ে নিচ্ছে মূল্যবান জলাশয়। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবিরা। আর এই অনিয়মের সুযোগ করে দিচ্ছেন খোদ সমবায় বিভাগের অসাধু কর্তাবাবুরা। এই অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাইল উপজেলায় মৎস্যজীবি সমিতির সংখ্যা ৪৩টি। এর মধ্যে হাতে গুনা কয়েকটা প্রকৃত মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি রয়েছে। বাকি বিভিন্ন নামে মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিয়েছেন প্রভাবশালিরা। এসব সমিতিতে প্রকৃত মৎস্যজীবি না হয়েও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালি নেতাকর্মী, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পর্যন্ত। প্রভাবশালী এসব ব্যক্তিদের তদবিরের কাছে সরকারি বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি।

মৎস্যজীবি সমিতি নিয়ে সমবায় কর্মকর্তার বাণিজ্য
সমবায় অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন

এরইমধ্যে শুধু স্থানীয় খাস পুকুর ও জলাশয় লীজ পাইয়ে দিতে সরাইল উপজেলা সমবায় অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দুইটি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি গঠন করিয়ে নিবন্ধন দেন। এই দুই সমিতি নিবন্ধনে তিনি নিয়মনীতি অনুসরণ করেননি। স্থানীয় মৎস্য বিভাগ থেকে সদস্যদের ব্যাপারে কোনো প্রকার প্রত্যয়নপত্রও নেননি। তিনি অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজ ক্ষমতায় এই দুই সমিতির নিবন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে স্মার্ট কার্ডধারী একই ব্যক্তি একাধিক মৎস্যজীবি সমিতিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে, সরাইল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছাঃ মায়মুনা জাহান বলেন, সমবায় অফিসার নিজের মনগড়া মতো ওই দুই সমিতির নিবন্ধন দিয়েছেন। নিয়ম থাকলেও সদস্যদের ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নেননি তিনি। কারা প্রকৃত মৎস্যজীবি তা প্রত্যয়ন দিবে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। কিন্তু সমবায় অফিসার নিজেই মৎস্যজীবি খুঁজে নিলেন, যা সত্যিই আশ্চর্যের ব্যাপার।

বিভিন্ন মৎস্যজীবি সমিতিতে অমৎস্যজীবিদের ছড়াছড়ি প্রসঙ্গে মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহান বলেন, সরকারের ঘোষণা আছে “জাল যার জলা তাঁর “। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো ” পানি যার মাছ তাঁর”। প্রকৃত মৎস্যজীবি বাছাইয়ে মৎস্য বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতার তদবির ও তাদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী মৎস্যজীবি স্মার্ট কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই অমৎস্যজীবিরা ঢুকে গেছে মৎস্যজীবি সমিতিগুলোতে।

উপজেলা সমবায় দফতর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন দেওয়া হয় “চাঁদের হাসি” নামে মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির। এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নিবন্ধন পায় “বরইচারা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি “। একেকটি সমিতিতে সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন।

সরাইল উপজেলা সমবায় অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, নিয়ম মেনেই সর্বশেষ দুইটি মৎস্যজীবি সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। সরকারি একটি পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, এখন থেকে মৎস্যজীবি সমিতি গঠনে সদস্যদের ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের কোন প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন নেই, সদস্যদের স্মার্ট কার্ড থাকলেই চলবে। একই ব্যক্তি একাধিক সমিতির সদস্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পরিপত্রে এমনটি উল্লেখ নেই যে ” একই ব্যক্তি একাধিক সমিতির সদস্য হতে পারবেন না”।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদের হাসি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অবস্থান উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামে। এ সমিতির সভাপতি আবু তালেব স্থানীয় ইউপি সদস্য। যদিও সমবায় অফিসার
তাঁকে মৎস্যজীবি হিসেবে দাবি করেছেন। উপজেলার কর্তাবাবুদের সহায়তায় চাঁদের হাসি মৎস্যজীবি সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেই বিশুতারা গ্রামের সরকারি মূল্যবান খাস পুকুর লীজে বাগিয়ে নিয়েছে।

পিবিএ/এআইএস/আরআই

আরও পড়ুন...