যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতার বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণের অভিযোগ

পিবিএ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংকে ‘যৌন শিকারি’ আখ্যা দেওয়া একটি নথি সেদেশের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) কাছে আছে। ওই নথিতে ৪০ থেকে ৫০ জন নারীকে ‘ধর্ষণে’র অভিযোগ আনা হয়েছে, যাদের অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন!

এফবিআইয়ের ওই তথ্যের বরাত দিয়ে রক্ষণশীল ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘স্ট্যান্ডপয়েন্টে’ কিংবদন্তি লুথার কিংকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন আমেরিকান ইতিহাসবেত্তা ডেভিড গ্যারো।

কিংয়ের আত্মজীবনী লিখে পুলিৎজার পুরস্কার জয় করা ডানপন্থী লেখক গ্যারোর এই প্রবন্ধ নিয়ে ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দাদের ঐতিহাসিক তথ্যের ব্যবহার এবং তার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

কিংকে নিয়ে ওই ম্যাগাজিনটি গত ৩০ মে আরেকটি বিতর্কিত কলাম ছাপে যেটি নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো বিখ্যাত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। গ্যারোর এই লেখাও গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকেরা ফিরিয়ে দেন।

গোপনে ধারণ করা একটি ‘অডিও’ থেকে কিংয়ের ব্যক্তিগত জীবনের এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে এফবিআই। ওই ‘অডিও’র বরাত দিয়ে গ্যারো লিখেছেন, দেশজুড়ে অসংখ্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কিংয়ের। শুধু তাই নয় মেরিল্যান্ড চার্চে সহিংস ধর্ষণের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অন্য ব্যক্তিকে হাসতে হাসতে ধর্ষণে উৎসাহ দেন।

এফবিআই ১৯৬০ থেকে ১৯৬৮ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কিংয়ের কার্যকলাপের এই সব তথ্য সংগ্রহ করার কথা বলছে। নথির কভার পেজে কিংয়ের মৃত্যুর পাঁচ বছর পরের অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের তারিখ দেওয়া আছে। আসলে কখন এগুলো লেখা হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয়।

কিংয়ের যৌনজীবন নিয়ে আগে থেকেই কিছুটা বিতর্ক ছিল। কিন্তু কখনোই এমন ভয়াবহ এবং বিতর্কিত অভিযোগ ওঠেনি।

গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে গ্যারো লিখেছেন, বিভিন্ন বিবাহিত এবং অবিবাহিত নারীর সঙ্গে কিংয়ের সম্পর্ক ছিল। এমনকি অর্থের বিনিময়েও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন তিনি।

নথিতে একটি সম্মেলনের সময়কার কথা বলা হয়েছে, সেখানে ওয়াশিংটন ডিসির উইলার্ড হোটেলে ‘কয়েক জন নারী’কে নিয়ে কিং ছিলেন।

প্রতিবেদনের দাবি, ওই নারীদের সঙ্গে সঙ্গী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন কিং। কে অস্বাভাবিকভাবে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারবে, সেটি নিয়ে কথা হয়।

তখন এক নারী এর বিরোধিতা করলে কিংয়ের এক সহকর্মী তৎক্ষণাৎ তাকে ধর্ষণ করেন। নথিতে অভিযুক্ত ধর্ষকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু গ্যারো ইঙ্গিত দিয়েছেন, অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি হচ্ছেন বাল্টিমোরের মন্ত্রী রেভ লোগান কার্স।

গ্যারো তার লেখায় একজন এফবিআই এজেন্টের কথা উল্লেখ করেছেন, যিনি ২৮ বছর আগে শ্বেতাঙ্গ এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই নারী কিংয়ের হাতে হেনস্তার শিকার হন। পুরো প্রবন্ধে তিনি যৌনতা বিষয়ক রগরগে সব ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা লেখার অযোগ্য।

এই তথ্য কি আসলেই সত্য?

ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকাটি তার প্রবন্ধকে ‘অনির্ভরযোগ্য’ বলছে। তারা নিজেরাও ওই রেকর্ডিং কিংবা নথি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

নথিটি আসলে কখন লেখা হয়েছে কিংবা কে সম্পাদনা করেছেন সেটি জানারও উপায় নেই। কারণ কিংয়ের সময়ে এফবিআই ডিরেক্টর ছিলেন উইলিয়াম সি সুলভিয়ান; ১৯৭৭ সালের একটি দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

গার্ডিয়ান বলছে, মার্কিন সরকারের এইসব গোয়েন্দা তথ্য সবসময় সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করা হয়, যা সাধারণের জানাশোনার অনেক বাইরে থাকে। এফবিআইয়ের ক্ষেত্রে নথির এমন প্রকাশ লজ্জাজনক।

তা ছাড়া কিং কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় এফবিআই সব সময় তার দোষ খুঁজত। এমনকি গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে তাকে একবার আত্মহত্যার পরামর্শ দিয়ে চিঠিও লেখা হয়। সেই চিঠির সঙ্গে কিংয়ের পরিবারের কাছে কয়েকটি অডিও টেপ পাঠানো হয়। হয়রানিমূলক সেই চিঠিতে তৎকালীন এফবিআই পরিচালক সুলভিয়ান লেখেন, ‘তোমার যৌন মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাও। এই রেকর্ডে তোমার নোংরা, বাজে এবং শয়তানি কথোপকথন খুঁজে পাবে।’

আরেক বিখ্যাত লেখক জেইন থোহারিস এই প্রবন্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলছেন, ‘এফবিআইয়ের এমন খবর যার কোনো বিশ্বাস যোগ্যতা নেই তা ব্যবহার করা একজন ইতিহাসবেত্তার জন্য দায়িত্বহীন কাণ্ড।’

গ্যারো অবশ্য তার লেখাকে সত্য বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, ২০২৭ সাল পর্যন্ত এফবিআইয়ের ওই নথির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়, কারণ ওই সময় পর্যন্ত রেকর্ডটি ‘সিল’ করা থাকবে।

 

পিবিএ/হক

আরও পড়ুন...