পর্দা করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন। কিন্তু নারী-পুরুষদের অনেকেই না জানার কারণে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করেন। তবে একজন পুরুষ ও একজন নারী ১৪ জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। এদের পরিচয় জানা থাকলে পর্দা পালন করা হবে সহজ।
যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করা যাবে; বোঝার সুবিধার্থে তাদের বিবরণ নারী-পুরুষ আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি করে তা তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষের জন্য- মা, বোন ও মেয়ে এবং নারীর জন্য- বাবা, ভাই ও ছেলে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে তা দেখানো হয়েছে।
একজন পুরুষ যে ১৪ জন (মা, বোন ও মেয়ে সম্পর্কিত) নারীর সঙ্গে দেখা করা বৈধ। তারা হলেন-
‘মা’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-
- নিজের মা : গর্ভধারিনী মা ও সৎ মা।
- দুধ মা : শিশুকালে যদি কোনো নারীর বুকের দুধ পান করে বড় হয় সন্তান।
- খালা : গর্ভধারিনী মায়ের আপন বোন।
- ফুফু : বাবার আপন বোন।
- শাশুড়ি : স্ত্রীর আপন মা।
‘বোন’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা জন-
- আপন বোন। এক বাবার ঔরসের সহদোর বোন।
- দুধ বোন : যে নারীর বুকের দুধ পান করে বড় হয়েছে, তার কন্যা সন্তান।
- দাদী : বাপের মা।
- নানী। মায়ের মা।
- নাতনী। আপন ছেলে ও মেয়ের ঘরের নাতনি।
‘মেয়ে’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা ৪ জন-
- নিজের মেয়ে।
- ভাতিজী : আপন ভাইয়ের মেয়ে।
- ভাগ্নী : আপন, সৎ ও দুধ বোনের মেয়ে।
- পুত্রবধু : ছেলের বউ।
আবার একজন নারী যে ১৪ জন (বাবা, ভাই ও ছেলে সম্পর্কিত) পুরুষের সঙ্গে দেখা করা বৈধ। তারা হলেন-
‘বাবা’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-
- বাবা: নিজের জন্মদাতা বাবা।
- দুধ বাবা : দুধ মার স্বামী।
- চাচা : বাবার আপন ভাই।
- মামা : মায়ের আপন ভাই।
- শ্বশুর : স্বামীর আপন বাবা।
‘ভাই’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-
- আপন ভাই : একই বাবার সন্তান।
- দুধ ভাই : দুগ্ধদানকারী মায়ের সন্তান।
- দাদা ভাই : আপন বাবার বাবা।
- নানা ভাই : নিজ মায়ের বাবা।
- নাতী : আপন ভাই-বোনের ছেলে-মেয়ের ঘরের সন্তান।
‘ছেলে’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা ৪ জন-
- ছেলে : নিজের ছেলে।
- ভাতিজা : আপন ভাইয়ের ছেলে।
- ভাগিনা : আপন বোনের ছেলে।
- জামাতা : নিজ মেয়ের স্বামী।
একজন নারী ও একজন পুরুষের জন্য উল্লেখিত ব্যক্তিদের ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা যাবে না। এমনকি অন্যদের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া অযথা কথাবার্তা বলাও গোনাহের কাজ। তা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট আয়াত ঘোষণা করে তা জানিয়ে দিয়েছেন-
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মে; বোনের মেয়ে; তোমাদের সে মা, যারা তোমাদের (বুকের) দুধ পান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে, যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রী। (সুরা নিসা : আয়াত ২৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে পর্দা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।