যে আমল বান্দার জীবনকে শান্তিময় করে তোলে

আমাদের জীবন আবর্তিত হয় এই কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে ঘিরেই। দুর্দশা ও হতাশাগ্রস্ত জীবনে একটুখানি সুখের আশায় কত কিছুই না আমাদের করতে হয়। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হই। কারণ আল্লাহ প্রদত্ত সুখ-শান্তি আমরা শুধু পার্থিব জিনিসের মাঝেই খুঁজে বেড়াই। মূল্যহীন এ দুনিয়ায় সুখ-শান্তি পেতে হলে ইসলামই আমাদের একমাত্র সমাধান। এখানে সুন্দর ও সুখময় জীবন উপভোগের কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো-
আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন :
ঈমান মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখে, হতাশা ও অশান্তি তাদের গ্রাস করতে পারবে না। মহান আল্লাহ তাদের সুখময় জীবন দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্টকর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।’(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)

সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করা : পার্থিব জীবনের যেকোনো কাজ প্রয়োজনীয় মাধ্যম গ্রহণ করে এর পরিণাম আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়াকে তাওয়াক্কুল বলা হয়। তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। কারণ এটি তাওহিদের প্রাণ বা ভিত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)

মহান আল্লাহ যার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান, তার জীবনে কোনো অপূর্ণতা থাকে না।

নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া : সুখময় ও সুন্দর জীবন উপভোগ করার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হচ্ছে, নিজের থেকে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এতে মানুষ আল্লাহর নিয়ামতগুলো উপলব্ধি করতে পারে। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও। তবে তোমাদের চেয়ে উঁচুস্তরের লোকদের দিকে লক্ষ্য করো না। কেননা আল্লাহর নিয়ামতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তম পন্থা। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩২০)

আল্লাহর স্মরণে অন্তরের প্রশান্তি : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)

ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগিতা : কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাকওয়া ও ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগিতা করো। পাপাচার ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা করো না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ। মুমিন মুমিনের ভাই। সে তার জমি সংরক্ষণ করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে হেফাজত করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)

হিংসাত্মক মনোভাব পরিহার : হিংসা মানুষের সুখ কেড়ে নেয়, আমল ধ্বংস করে। হিংসুক কখনো সুখী হতে পারে না। তাই ইসলামে অন্যের প্রতি হিংসা পোষণ করা নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৩)

সবার সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ : ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ মানুষকে প্রশান্তি দেয়। এটি থাকলে মানুষ একে অপরের কল্যাণকামী হয়ে ওঠে। এর সুফল পরকালেও মানুষ ভোগ করতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার জন্য যারা একে অন্যকে ভালোবেসেছিলে তারা কোথায়? আমি আজ তাদের আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজকের এই দিনে আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)

মহান আল্লাহ আমাদের সুখময় জীবন উপভোগ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন...