যে কারণে এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ !

পিবিএ,ঢাকা: মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ চায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়া ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমরা মোট ২০টি প্রস্তাবনা দিয়েছি। এরমধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধের প্রস্তাবনাও রয়েছে।

এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, গত দুই বছরে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি, ঈদে মোটরসাইকেলে চড়ে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়েন। আমি গত বছর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে আহতদের মধ্যে অধিকাংশই মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন।

তিনি বলেন, গত দুই বছরের পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি, ঈদে ঢাকা থেকে দূরের জেলাগুলোতেও অনেকে মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি যান। এতে দুর্ঘটনায় পড়েন অনেকে। ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে বলে আমরা মনে করি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ অথবা ঢাকা থেকে গাজীপুর নিয়মিত আসা-যাওয়া করে থাকেন তাদের সঙ্গে যারা শুধুমাত্র ঈদে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি যান তাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। ঢাকা থেকে যারা পার্শবর্তী জেলাগুলোতে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন তাদের পেছনে কিন্তু ব্যাগ থাকে না। কিন্তু যারা শুধুমাত্র ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে ঈদে বাড়ি যান তাদের পেছনে ব্যাগ থাকে।

তিনি বলেন, এই ব্যাগের কারণে অনেকসময় ভারসাম্য রাখা যায় না। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে। তাই আমরা মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনা দিয়েছি।

এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পেয়েছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার তার নিজস্ব গতিতেই চলে। অনেকগুলো বিষয় হয়তো সরকার আমলে নেয় আবার অনেকগুলো বিষয় নেয় না। আমরা নাগরিকদের বিষয়গুলো জানানোর প্রয়োজন বলে মনে করেছি এবং জানিয়ে দিয়েছি। সরকার যেসমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার নিঃসন্দেহে তারা সেগুলো নিবে। বিষয়গুলো যেহেতু অতি গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরা আশা করছি এগুলো সরকারের বিবেচনায় উল্লেখযোগ্য স্থান পাবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০ প্রস্তাবনা-

১. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহিন যানবাহন, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিক্সার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা।

২. মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা।

৩. গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা।

৪. টোল প্লাজার সবকটি বুথ চালু করা ও দ্রুত গাড়ি পাসিং এর ব্যবস্থা করা।

৫. মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী হাটবাজার উচ্ছেদ করা।

৬. দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার ও উল্টোপথের গাড়ি চলাচল বন্ধ করা।

৭. মহাসড়ক অবৈধ দখল ও পার্কিংমুক্ত করা।

৮. অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা।

৯. অযান্ত্রিক যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রীবহণ নিষিদ্ধ করা।

১০. ঈদের আগে ও পরে সড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজী বন্ধ করা।

১১. লাইসেন্সবিহিন ও অদক্ষ চালক ঈদযাত্রায় নিষিদ্ধ করা।

১২. বিরতিহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ করা।

১৩. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুটপাত, জেব্রাক্রসিং, পদচারী সেতু, আন্ডারপাস, ওভারপাস দখলমুক্ত করে যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের ব্যাবস্থা রাখা।

১৪. ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা।

১৫. ফেরীঘাট, লঞ্চঘাট, নগরীর প্রবেশমুখ ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন সমূহে দ্রুত গাড়ি পাসিংএর ব্যবস্থা করা।

১৬. যাত্রা বিরতিকালে খাবার হোটেলে যাত্রীসাধারণ যাতে মানসম্পন্ন সাশ্রয়ীমূল্যে সেহেরী ও ইফতারি গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

১৭. দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন দ্রুত উদ্ধার আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা।

১৮. অপ্রত্যাশিত যানজটের কবলে আটকে পড়া যাত্রীদের টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা রাখা, ইফতারির সুবিধার্থে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা।

১৯. জাতীয় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন, মিডিয়ান গ্যাপ ও বাঁকে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা রাখা।

২০. সড়কে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ঈদের ছুটি বাতিল করা।

বিডি২৪লাইভ/এসএইচআর/এমআর

আরও পড়ুন...