যে কারণে পদ হারালেন পঙ্কজ

পিবিএ,ঢাকা: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ ইতোমধ্যে পঙ্কজ দেবনাথকে দলের সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবহিত করেছেন।

কেন হঠাৎ পঙ্কজকে সাংগঠনিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এ বিষয়ে গতকাল তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,‘এ বিষয়ে মাননীয়া নেত্রী দলের জন্য যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ এরপর ফোন কেটে দেন।
কিন্তু জানা গেছে, একটি সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পঙ্কজ দেবনাথ সম্পর্কে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে এতে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, দলীয় কর্মকাণ্ডের চেয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন এ নেতা।

ওই রিপোর্টে জানানো হয়, শীর্ষ এ নেতার সঙ্গে আরো ডজনখানেক মাঠ পর্যায়ের নেতার নামও উঠে এসেছে। এদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত ভবন, শিক্ষা ভবন, বিদ্যুৎ ভবন, খাদ্য ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সংগঠন ও দলীয় পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে তারা টেন্ডার বাগিয়ে নেন।

তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকেও অভিযোগ জমা পড়েছিল পঙ্কজ দেবসাথের বিরুদ্ধে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম ভাঙিয়ে ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী গঠনের অভিযোগ রয়েছে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে। নিজ এলাকায় ক্যাডারদের ব্যবহার করে খেয়াঘাট, টেম্পো স্ট্যান্ড, জলাশয়, লঞ্চঘাট, হাট-বাজার, নদীর বালু, মাছের পাড়া, খাদ্য গোডাউন, ভূমি অফিস, ইটভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। এছাড়াও সরকারি খাস জমি বরাদ্দের নামেও বাণিজ্য করেছেন পঙ্কজ। আর দখল বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তো রয়েছেই। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এক নারীকে হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে। এক নারীকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পঙ্কজকে নিয়ে কিছুদিন আগে তোলপাড় হওয়ার পর তিনি মামলা করেন এবং এর প্রতিবাদ জানান।
সম্প্রতি সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অসাংগঠনিক কার্যক্রম, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ও লুটপাটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা আনোয়ার হোসেন সাগর বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথ ১/১১-এর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-৪ আসনসহ রাজধানীর উত্তরা ও ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল বাড়ি, অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট, ও গার্মেন্টস এবং পরিবহন রয়েছে।’ হুন্ডি, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পঙ্কজ দেশের বাইরে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতি হন মোল্লা আবু কাওছার, আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।

দায়িত্ব পাওয়ার পর কার্যত সংগঠনের কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেননি এই দুই নেতা। বরং তাদের অহঙ্কারের ভারে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পঙ্কজের সঙ্গে মোল্লা কাওছারকেও সাংগঠনিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বরিশাল-৪ আসন থেকে দশম জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন এ পর্যন্ত দু’বার হয়েছে। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক পদেই বহাল থাকেন তিনি। আগামী ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের তৃতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...