যে কারণে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মিটিংয়ের আগে মোবাইল জমা নেয়া হয়

পিবিএ,ঢাকা: ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের আগে শরিকদের মোবাইল জমা নেয়ায় বিএনপির আস্থাহীনতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা। সম্প্রতি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের সোয়া ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে শরিক দলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন জমা নেয়ার প্রেক্ষিতে নেতারা এ কথা বলেন।

জোটের শরিক দলের দুইজন চেয়ারম্যান এ বিষয়ে বলেন, বৈঠকের আগে মোবাইল জমা নেয়া এটা নেতাদের জন্য চরম অপমানজনক। পাশাপাশি বিএনপি শরিক দলের নেতাদের বিশ্বাস করে না সেটাই প্রমাণ হয়।

বৈঠকে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামি এবং খেলাফত মজলিসের কোনো প্রতিনিধি অংশ নেননি। এ ছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ ইবরাহিম বীর বিক্রম এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বৈঠকে অংশ নেননি।

দলগুলোর পক্ষ থেকে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান এবং জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম প্রমুখ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবি জানিয়ে আগামী জুলাই মাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ব্যপারে আগামী সভায় নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০ জোট বিরাট শক্তি। এ জোটে ঐক্য সুদৃঢ় আছে, এখানে কোনো সংকট নেই। বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রস্তাবিত বাজেট, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রেল দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। জোটের বৈঠকে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও জানান নজরুল।

জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, ‘জোট সম্প্রসারণের চিন্তা-ভাবনা আপাতত নেই।’ বৈঠকে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ‘তাদের তো আসার কথা ছিল, হয়তো কোনো ঝামেলার কারণে আসতে পারেননি।’

জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের গুঞ্জন নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এর জবাব দেন।

সেলিম বলেন, ‘আমরা ২০ দলীয় জোটে ছিলাম, আছি, থাকব।’ বৈঠকের আগে নেতাদের মোবাইল জমা নেয়া আস্থাহীনতার ব্যাপার কিনা জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘জোটের কিছু দলের নেতা আছেন যাদের প্রতি আস্থা রাখা যায় না। অনেক সময় অনেক ধরনের কথা বলা হয়, তা যাতে ফাঁস না হয় এ কারণেই মোবাইল জমা নেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আস্থাহীনতার ব্যাপার না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নেতাদের মোবাইল জমা নেয়া হয়।’

ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন সভাপতিত্ব করতেন তখন মোবাইল জমা নেয়া হত। এটা হচ্ছে বৈঠকের খবর যেন লিক না হয় এ কারণে মোবাইল জমা নেয়া হয়। এটা একটা সিস্টেম।’

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘শৃঙ্খলার স্বার্থে মোবাইল জমা নেয়া হয়। এ বিষয়টি নতুন নয়, স্বাভাবিক।

 

পিবিএ /এএ

আরও পড়ুন...