চারিত্রিক গুণাবলীই মুমিনের সেরা সম্বল। দুনিয়ার জীবনে যার চলাফেরা, কথা বলার ভাবভঙ্গি যত সুন্দর তার জীবনমান আল্লাহর কাছে অনেক উঁচু ও সম্মানের। আর তা মানুষের পরকালকেও সম্মান ও মর্যাদার আসনে পৌঁছে দেয়। কোরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে তা প্রমাণিত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
হজর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একদিন তিনি মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বললেন- হে লোক সকল! তোমরা বিনয়ী হও। আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সে নিজেকে নিজে ছোট মনে করলেও কিন্তু মানুষের চোখে খুবই মহান ও সম্মানিত হয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার করে, আল্লাহ তাআলা তাকে হেয় করে দেন। সে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট- অপাংক্তেয় এবং সে নিজেকে নিজে খুব বড় মনে করে। এমনকি সে শেষ পর্যন্ত মানুষের চোখে কুকুর ও শূকরের চেয়েও অধিক ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয়।’ (বায়হাকি, মিশকাতুল মাসাবিহ)
হাদিস থেকে বুঝা গেলো- বিনয় ও নম্রতা মানুষের জন্য অনেক মর্যাদা ও সম্মানের চারিত্রিক গুণাবলী। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মুমিনের চারিত্রের গুণাবলী কেমন হবে তা এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا
‘তারাই পরম দয়াময়ের বান্দা, যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে (বিনয়ী) এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে- ‘সালাম’ বা শান্তি।’ (সুরা ফোরকান ; আয়াত৬৩ )
মনে রাখতে হবে
বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর হুকুম হলো, তারা যেন জমিনে কাজ সম্পাদনে বিনয়ী ও নম্র হয়। চারিত্রিক সৌন্দর্য ও ব্যবহার শান্তিপূর্ণ হয়। এমনকি যদি অজ্ঞরা কোনো বিষয়ে এসব বিনয়ী ও নম্র বান্দারের ডাক দেয় বা সম্বোধন করে তবে তারা সবাই যেন বলেন- ‘সালাম’ বা ’শান্তি’
আর আল্লাহ তাআলার দুনিয়ার জমিনে তাঁর রাজত্বে কাউকে গর্ব-অহঙ্কার করে বিশৃঙ্ক্ষল চলাফেরা করার অনুমতি দেননি। আর এভাবে চলাফেরাও করা যাবে না। বরং চলাফেরা করতে নম্র-ভদ্রভাবে, বিনয়ের সঙ্গে। যার ফলে মানুষ পাবে সম্মানজনক মর্যাদা।
কেমন ছিলেন নবিজী?
হাদিস থেকে আরও জানা যায়, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব ধীরে চলতেন না; বরং কিছুটা দ্রুত গতিতে চলতেন। হাদিসের ভাষ্য এমন-
كَأنَّهَا الأرْضُ تُطْوَى لَهُ
‘চলার সময় পথ যেন তার জন্য সংকুচিত হত।’ (ইবনে হিব্বান)
এ কারণেই আগের মুমিন বান্দারা ইচ্ছাকৃতভাবেই রোগীদের ন্যায় ধীরে চলাকে অহংকার ও কৃত্রিমতার আলামত হওয়ার কারণে মাকরূহ সাব্যস্ত করেছেন। এ কারণেই হজরত হাসান বসরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-
يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا
অর্থাৎ খাঁটি মুমিনদের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,চোখ, কৰ্ণ, হাত, পা, আল্লাহর সামনে হীন ও অক্ষম হয়ে থাকে। অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে দেখে অপারগ ও পঙ্গু মনে করে, অথচ তারা রুগ্নও নয় এবং পঙ্গুও নয়; বরং সুস্থ ও সবল। আর তাদের উপর আল্লাহভীতিও প্রবল; যা অন্যদের উপর নেই। এ ভীতি দুনিয়ার সাংসারিক কাজকর্ম থেকে আখেরাতের চিন্তা নিবৃত্ত রাখে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে না এবং তার সমস্ত চিন্তা দুনিয়ার কাজেই ব্যাপৃত, সে সর্বদা দুঃখই ভোগ করে। কারণ, সে তো দুনিয়ায় পুরোপুরি পায় না এবং আখেরাতের কাজেও অংশগ্রহণ করে না। যে ব্যক্তি পানাহারের বস্তুর মধ্যেই আল্লাহর নেয়ামত সীমিত মনে করে এবং উত্তম চরিত্রের প্ৰতি লক্ষ্য করে না, তার জ্ঞান খুবই অল্প এবং তার জন্য শাস্তি তৈরি রয়েছে।
মুমিন ব্যক্তির কাজ
যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদের সাথে কথা বলে, তখন তারা বলে- ‘সালাম’। এখানে جَاهِلُون শব্দের অর্থ বিদ্যাহীন ব্যক্তি নয়। বরং যারা মূর্খতার কাজ ও মূর্খতাপ্রসূত কথাবার্তা বলে, যদিও বাস্তবে বিদ্বানও বটে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করবে না; আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- ‘আর যখন তারা কোনো বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সঙ্গে কথা বলি না।’ (সুরা আল-কাসাস : আয়াত ৫৫)
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচত, চারিত্রিক গুণাবলীর যথাযথভাবে ঠিক রাখা। হাদিসের উপর আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আচরণে নম্র ও বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। উত্তম চারিত্রিক গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।