যে রুপে দেখা যাবে শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল

পিবিএ,ঢাকা: বহুল প্রতীক্ষিত শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল হবে অত্যাধুনিক মডেলের। তিন তলাবিশিষ্ট স্টীল ও কংক্রিটের কম্পোজিট স্ট্রাকচার ভবনে থাকবে সব কটি ওয়ানওয়ে এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট। রাজধানীর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে যারা আসবেন তারা নিকুুঞ্জের লা মেরিডিয়ান পয়েন্ট থেকে উঠে যাবেন টাার্মিনাল কানেক্টিং সড়কে। যেখানে থাকবে টার্মিনালের এন্ট্রি গেট। তিন তলা থেকে বহির্গামী যাত্রীরা এস্কেলেটরে নেমে যাবেন দ্বিতীয় তলায়, যেখানে থাকবে বহির্গামী ও এ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ও চেকইন কাউন্টার। আবার রাজধানীর উত্তর প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বর্তমান বলাকার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবেশ করে উড়াল সেতু দিয়ে চলে যাবেন টার্মিনাল ভবনে।

একইভাবে টার্মিনাল থেকে বের হবার সময় একই আন্ডারপাস ও ওভারপাস দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়া যাবে। প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী জানিয়েছেন, থার্ড টার্মিনালে যাতায়াতে যানজটের বিন্দুুমাত্র কারণও থাকবে না। এমনভাবে ট্রাফিক সিস্টেম সুযোগ রাখা হয়েছে যা কেবল চোখেই দেখার মতো, বলার মতো নয়। অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনাল হবে বিশ্বের অন্যতম মডেলের। এতে থাকবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ৫৬টি চেকইন সেন্টার, ১৬টি এ্যারাইভাল লাগেজ বেল্ট, আধুনিক ভিআইপি ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, থাকবে মেট্রোরেল কানেকশন। যাত্রী ও দর্শনার্থীর আসা-যাওয়ার পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক এসকেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট, রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবনসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং থাকবেও। তিনতলা টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যে রাখা হবে নান্দনিকতার ছোঁয়া। থার্ড টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। আর নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার।

ভিভিআইপি কমপ্লেক্স হবে পাঁচ হাজার ৯০০ বর্গমিটার আয়তনের। এ প্রকল্পের জন্য ২০১৭ সালের ১১ জুন জাপানের নিপ্পন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা তৃতীয় টার্মিনালের নক্সা পর্যালোচনা, মূল নির্মাণ কাজের দরপত্রের খসড়া এবং নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকিও করবে।

জানা গেছে- নতুন এ টার্মিনাাল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ জন্য স্থানান্তর ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার ও পদ্মা ওয়েল ডিপো। হ্যাঙ্গার স্থানান্তরের কাজও এগিয়ে চলছে জোর গতিতেই। শাহজালালের সর্ব উত্তর প্রান্তে শুরু হয়েছে মাটি খননের কর্ময্জ্ঞ। এর মূল নক্সায় রয়েছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, যদিও প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে ১২টি। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাকি ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হবে। আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও আসবে পরিবর্তন। বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে।

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (সিএ)। আধুনিক এই টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সরকারের বৃহৎ এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। মোট টাকার মধ্যে এই প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। বাকি অর্থের পুরোটাই দেবে জাইকা। সেভাবেই এগোচ্ছে সবকিছু।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর দেশে আট শতাংশ হারে আকাশপথের যাত্রী বাড়ছে। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ পরিমাণ যাত্রী ধারণের সক্ষমতা নেই। এজন্য তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...