হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সংহতি ও সাম্যের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে। সাধারণত অন্য কোনো ইবাদতে একসঙ্গে এমনটা পাওয়া না।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেন। সেখানে তারা আল্লাহপ্রেমের পাঠ চুকিয়ে রাসুলপ্রেমের ষোলকলা পূর্ণ করেন।
হজের সওয়াব বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজ সম্পর্কে মনীষী ও উত্তরসূরীদের অসংখ্য আবেগ-গাথা আলাচিত ও চর্চিত হয়েছে। কারণ, মুমিনমাত্রই কালো গিলাফ ও সবুজ গম্বুজের ছায়ার স্বপ্ন দেখে।
হজের সওয়াব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ২০৬)
আমাদের সমাজে অনেকে আছেন, যাদের হজ আদায়ের অথবা ওমরায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজ-ওমরাহর সওয়াব অর্জনের চমৎকার সুযোগ রয়েছে। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে সেসব আমল বাতলে দিয়েছেন।
এক. ফরজ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া
আবু উমামা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর থেকে ওজু করে (মসজিদের দিকে) বের হয়, সেই ব্যক্তির সওয়াব ইহরাম বাঁধা হাজির মতো হয়। ’ (আহমাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২১২; আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৮; তারগিব, হাদিস : ৩২০)
দুই. দ্বীন শেখা-শেখানোর জন্য মসজিদে গমন
আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কথা শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে গেল, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে। ’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৪৭৩)
তিন. জামাতে নামাজ আদায়
আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করলো, সে যেন হজ করে আসলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলো, সে যেন ওমরাহ করে আসলো। ’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭৮)
চার. সকাল-সন্ধ্যার জিকির
আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একবার রাসুল (সা.)-কে বলি, হে আল্লাহর রাসুল! ধনী ব্যক্তিরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা হজ করেন, আমরা হজ করি না। তারা সংগ্রাম-যুদ্ধে শরিক হন, আমরা শরিক হতে পারি না। আরো আরো…। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমালের কথা বলবো যেটা তোমরা করলে তোমরা তারা যে আমল করে তারচেয়ে বেশি সওয়াব পাবে? আর সেটা হলো- প্রতি নামাজের পর তোমরা ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ও ৩৩ আলহামদুল্লিাহ পড়ো। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৫৪)
পাঁচ. ইশরাকের নামাজ পড়া
ফজরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা। আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করলো, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব নিয়ে ফিরলো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)