পিবিএ ডেস্ক: মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ। (বুখারী: ১৯০৪)।
ঢাল যেমন একজন যুদ্ধাকে তীর, গুলি বা যেকোনো রকম নিক্ষেপণ অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমন রোজাও একজন মুমিন ব্যক্তিকে সবধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রোজাদারের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য রাইয়ান নামক দরজা থাকবে, যার ভেতর দিয়ে কেবল রোজাদাররা বেহেশতে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্যকেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারী :৩৪০৪)।
আবার এর বিপরীত অন্য হাদিসে এসেছে- ‘এমন অনেক রোজাদার আছেন, যাদের রোজা পালন উপবাস করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার রাত জেগে ইবাদত করা এমন অনেক আবেদ আছেন, যাদের রাতজাগরণে কোনো ফল অর্জিত হয় না।’
কারণ রোজা রেখে তারা পাঁচটি মারাত্মক গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেনি। ফলে তাদের রোজা পালন হয়ে যায় উপবাস এবং রাত জাগরণ হয় নিষ্ফল। তাই রমজানে দিনের বেলায় রোজা পালন ও রাত জেগে ইবাদততে অর্থবহ করতে এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা একান্ত আবশ্যক। আর তাহলো-
(১) ফাহেশা কথা থেকে বিরত থাকা :
রোজা রেখে পরস্পর ফাহেশা কথা বলা যেমন নিষিদ্ধ আবার অশ্লীল ভাষা ও বাদ্য-বাজনায় ভরপুর বিনোদন থেকে চোখ ও কানকে হেফাজত করা জরুরি। অশ্লীল এসক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)।
(২) গিবত ও মিথ্যাচার না করা :
রোজা বান্দার জন্য ঢাল স্বরূপ। যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা পরিহার করতে পারলো না কিংবা অন্যের সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে পারলো না তার রোজা উপবাস ছাড়া কিছুই নয় বলেছেন বিশ্বনবী। তাই রোজা ওই ব্যক্তির জন্য ঢাল, যে ব্যক্তি গিবত ও মিথ্যা পরিহার করতে পারলো। সুতরাং রোজা রেখে মিথ্যা, গিবত, কড়া কথা, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
(৩) রূঢ় আচরণ থেকে বিরত থাকা :
রোজা আল্লাহর মাস। এ মাসে আল্লাহ বান্দাকে পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করেন। তাই রমজানে সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করা সৎকর্মশীল বান্দার গুণ। তাই কোনো রোজাদারকে যেমন কোনো কষ্ট দেয়া উচিত হবে না, তেমিন করো সঙ্গে রূঢ় আচরণ করাও ঠিক হবে না। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ ও কল্যাণ কামনাই জরুরি। রহমত লাভে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)
অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমার প্রতি ও আমার বাবা-মার প্রতি যে (রহমত) অনুগ্রহ দান করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমাকে শক্তি দান করুন আর যেন এমন (নেক আমল) সৎকাজ করতে পারি যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন আর আপনি দয়া করে আমাকে আপনার সৎকর্মশীল (নেক) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন।’
(৪) খারাপ দৃষ্টিতে না তাকানো :
রমজানের চলাফেরা উঠা-বসা সব হবে মহান আল্লাহর জন্য। যেহেতু মাস আল্লাহর আর এ মাসের সব কাজও হবে আল্লাহর জন্য। তাই সব কাজে চোখের হেফাজত জরুরি। কুদৃষ্টিতে তাকানো মহা অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তানের তীরসমূহের মধ্যে মানুষের দৃষ্টি শক্তিও (কুদৃষ্টি) একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এ তীর বিদ্ধ হওয়া থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির হৃদয়ে ঈমানের এমন দৃষ্টিশক্তি দান করেন যা তাকে মজা ও স্বাদ অনুভব করতে সহায়তা করে।
কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামের তাসবিহ বেশি বেশি পড়া-
যারা নিয়মিত আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম (اَلْحَفِيْظُ) ‘আল-হাফিজু’ পাঠ করবে, তিনি তাঁর ওই প্রিয় বান্দাকে পাপ কাজে পতিত হওয়া থেকে হেফাজত করবেন।
(৫) পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা :
রোজা রেখে কোনো ব্যক্তির বদনামি বা পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা জরুরি। পরনিন্দা হলো কারো ব্যাপারে কুৎসা রটানো। কোরআনুল কারিমে এ কাজকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
‘কোনো ব্যক্তির পেছনে এমন কোনো কথা বলা, যা তার সামনে বললে সে ব্যক্তি নারাজ হয়।’ সাহাবারা জানতে চাইলেন যে, ওই ব্যক্তির মাঝে যদি সেই দোষ বাস্তবেই থাকে? প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবেই তো গিবত বা কুৎসা রটনো হলো। আর যদি ঘটনা সত্য না হয়ে মিথ্যা হয় তবে তার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হলো। যেটি আরো বড় মারাত্মক অপরাধ।’ নাউজুবিল্লাহ!
সুতরাং মুমিন মুসলমানের কাছে রোজার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষার পর রমজান পেয়ে তাতে এ কথা ও গর্হিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে না পারলে রমজানের রোজা পালন ও ইবাদত কোনোটি সার্থক ও সফল হবে না।
কাজগুলো শুধু রোজা অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন নয় বরং সবসময়ের জন্যই এ কাজগুলো অন্যায় ও ঘৃণিত কাজ। বছর জুড়ে এ কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে রমজানই এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার উপযুক্ত সময়।
তাই মুমিন মুসলমানের উচিত এ কাজগুলো থেকে বিরত থেকে রোজা ও ইবাদতের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা।
পিবিএ/এমএসএম