মেজবাহুল হিমেল,রংপুর: আমাদের সমাজে পিতারা এতটাই অসহায়, যেন মেয়ে জন্ম দেওয়াটা একটা বড় ধরনের ক্রাইম। মেয়ে যত বড় হয় পিতার চিন্তা ততই বাড়তে থাকে। তার আদরের দুলালিকে পাত্রস্থ করতে হবে, একদিকে যেমন মান সম্মানের ভয়, মেয়ে কখন কি করে বসে, মেয়েদের দোষ সমাজে ট্যাবু। ছেলেদের দোষ গুলোকে হাজার হোক ব্যাটা ছেলে বা সোনার আংটি বাঁকা ভালো বলে বাহবা দেওয়া হয়। যত দোষ নন্দ ঘোষ সেই মেয়েরই।
বিয়ে সে ত আরেক অধঃস্তনতার উপাখ্যান। ইসলাম মেয়েদের দিয়েছে মোহরের সম্মান, পিতাকে করেছে সম্মানিত, আর আধুনিকতাবাদি সমাজ মেয়ের বাবাকে করেছে দায়গ্রস্ত, হেয়। মেয়ের দরদাম ঠিক করে দিয়েছে যার ভিত্তিতে শ্বশুরবাড়িতে তার অবস্থান তৈরি হবে। হোক সে লাটের বেটি বা হায়ার স্টাডিজ করা মেমসাহেব তাতে এই মুখপোড়া সমাজের কিবা আসে যায়?
দিনে দিনে এই যৌতুকের মত ঘৃন্য একটি প্রথা নতুন নতুন মোড়কে নিজেকে ঢেলে সাজাচ্ছে ভদ্রতার মুখোশে। সমাজে যারা কেউকেটা তারা এখন যৌতুকের কথা মুখে বলাটাকে ছ্যাচরামি মনে করে তাই মেয়ের বাবার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তার খুশির ওপর ছেড়ে দেন। আচ্ছা খুশির কি কোন লিমিটেশন আছে?? আর মেয়ে জামাইয়ের খুশি কিনতে গিয়ে মেয়ের বাবার নাভিশ্বাস উঠে যায় সারা জীবনের সঞ্চয় খুশি কিনতে খোয়াতে হয়। তারপরও কোন জামাই বাবাজি বলেনা বুক ফুলিয়ে যে আমার কিছু লাগবে না। বরং শ্বশুরবাড়ির দেয়া জিনিস তারও প্রাউডনেস বাড়িয়ে দেয়। মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বাবারও খুশির ঠেলায় হিসেব গুনতে হয় একটি ২-২-৫ লক্ষ টাকার গাড়ির সাথে ১ লক্ষ মুল্যমানের ফার্নিচার। এর বেশি কেউ দিতে চাইলে আরও ভালো ক্ষীরে যত গুড় দিবেন ততই তো মিষ্টি হবে।
এ উপাখ্যান আমার স্ব অঞ্চলেরই বাংলাদেশে অনেক জেলাতেই এই প্রাকটিস নেই কিন্তু উত্তরবঙ্গে এটি একটি জঘন্য সোশ্যাল প্রাকটিস রীতিমত ম্যালপ্রাকটিসে পরিণত হয়েছে। আমি এমন সরকারী চাকুরীজীবিকেও ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যৌতুক নিতে দেখেছি।এর বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হওয়া উচিৎ। মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো ও জরুরী। শুধুমাত্র শিক্ষা এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না যদি তাই হত তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি শিক্ষার্থী সুমাইয়া হয়তো আমাদের মাঝে থাকত।
পণ্য নয় যার বাজারমুল্য আছে বরং তারাও মানুষ। অবমুল্যায়ন কারোই প্রাপ্য হতে পারেনা।
পিতার কন্যাদায় ও আমাদের বাস্তবতা
লেখক: জেসমিন নাহার, শিক্ষার্থী; নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়