পিবিএ,রংপুর: রংপুরের চরাঞ্চলে কৃষি পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির কদর বাড়ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে সময়ের চাহিদা মেটাতে মানুষ একেক সময় একেক পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়। কয়েক বছর আগেও রংপুর অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির কথা খুব একটা ভাবার বিষয় ছিল না। এ অঞ্চলে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাহন বলতে ছিল গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি। গরুর গাড়িকে নিয়ে গান কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী কতইনা বন্দনা করেছেন। গরুর গাড়ির চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল হাজার হাজার মানুষ। অনেক স্থানেই এটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু কালের চাহিদা মেটাতে গিয়ে গরু, মহিষের গাড়ি এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
তিন বছর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধা, কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারীর তিস্তার চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। ভ্যান সদৃশ গাড়ির সামনে ঘোড়া জুড়ে দিয়ে বাহনটি চলে। তিস্তার চরসহ প্রত্যন্ত গ্রামে রাস্তা ঘাটের অভাবে যেখানে কোনো যান্ত্রিক বাহন চলাচল করে না সেখানে এই ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা। জমি থেকে উৎপাদিত ফসল গোলায় নিয়ে যেতে জুড়ি নেই বাহনটির। দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব এলাকায়।
সরেজমিনে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের জয় রাম ওঝা, ইচলী চর, শংকরদহসহ লালমনিরহাটে তিস্তা চরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ক্ষেত থেকে কৃষি দ্রব্য পরিবনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে পানি কম বলে নৌকায় কৃষি পণ্য পরিবহনে অনেক ঝক্কি-ঝামেলার কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে এই ঘোড়ার গাড়ি। কৃষি পণ্য নিয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে আসছে ঘোড়ার গাড়ি কিংবা চর পেরিয়ে কেউবা কৃষি পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন তিস্তার ওপারে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায়। চরের হারুন মিয়া বলেন, ক্ষেত থেকে উত্তোলনকৃত কৃষি পণ্য কিনতে প্রতিদিন সকালে ঘোড়ারগাড়ি নিয়ে চরে হাজির হন ব্যবসায়ীরা।
কালীগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী মোজাহার জানান, এখন গরু, মহিষের গাড়ি পাওয়া যায় না। এ ছাড়া চরে রিকশা-ভ্যানও চলে না। তাই ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসেছি। সোলতান মিয়া , সমসের আলী বলেন, গঙ্গাচড়ায় তিস্তাার
চরে ব্যাপক কৃষি চাষবাদ হওয়ায় বছর তিনেক ধরে ঘোড়ারগাড়ির প্রচলন দেখা যায়। মহিপুর এলাকার চাষি আব্দুর রশিদ মিয়া ঘোড়ার গাড়িতে কৃষি পণ্য, শাক, সবজি নিয়ে যাচ্ছিলেন নদীর ওপারে।
তিনি জানান, নদীতে পানি না থাকায় নৌকায় খুব ঝামেলা, তাই ঘোড়ার গাড়িই ভরসা। ঘোড়ার গাড়িতে ১০-১২ মণ আলু পরিবহন করা যায় বলে জানান তিনি। ইচলী চরের গোলজার হোসেন আফছার আলী বলেন, গরুর গাড়ির জায়গায় এখন হ্যামর এদিক ঘোড়ার ঘাড়ি চাহিদা বাড়ছে। ঘোড়ারগাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাড়ি তৈরির খরচ ও ঘোড়ার দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকায় অনেকেই এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। গাড়ি চালানোর উপযোগী একটি ঘোড়া ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায় বলে তারা জানান।
এ পেশাকে পাকাপোক্ত করতে চরাঞ্চলে অনেকে ঘোড়া পালনও করছেন। শংকরদহ চরের ঘোড়ারগাড়ি চালক আমিনুর রহমান জানান, মালামাল বহন করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। ঘোড়ার খাদ্যের যোগান দিয়েও এতে তার সংসার চলে। গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম কম এবং তেমন ঝুঁকি নেই বলেও জানান তিনি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় রংপুর অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী গর, মহিষ গাড়ি বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলেও তার স্থান দখল করে নিয়েছে এই ঘোড়ার গাড়ি।
পিবিএ/এসআই/আরআই