পিবিএ,রংপুর: খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে ১০-১৫টি বিকল গাড়ি। কোনোটাতে চাকা আছে, কোনটাতে নেই। আবার কোথাও নাট বল্টু কিছুই নেই। গ্লাস ভাঙা, লক্কড়-ঝক্কড় বডি। হদিস নেই ইঞ্জিনসহ মূল্যবান অনেক যন্ত্রাংশের। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে বছরের পর বছর এমন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে এসব বিআরটিসি বাস। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের রাষ্ট্রীয় খরচে কেনা এই বাসগুলো।
সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর তাজহাট আলমনগর মৌজার রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের পাশে বিআরটিসি বাস খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব বাস চালুর উদ্যোগ তো দূরের কথা, খোয়া যাওয়া যন্ত্রপাতির হিসেবই জানেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সচেতন মহলসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিকল বাসগুলো সচল করতে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর দুর্নীতির ফলে বিআরটিসি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একারণে বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা বাসগুলো সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই।
রংপুর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, ‘বিআরটিসি লাভজনক একটা সেক্টর। অথচ এই সেক্টরে সব সময়ই লোকসানের হিসেব কষা হয়। এই খাতে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও বছরের পর যাত্রীদের অনুন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিআরটিসি। একই অভিযোগ পার্কের মোড় এলাকার চঞ্চল মাহমুদের বলেন, অনেক দিন ধরে বাসগুলো পড়ে আছে। এগুলো মেরামত করার পদক্ষেপ নেই। দেখে মনে হচ্ছে, বিআরটিসিতে এসব গাড়ির খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ নেই।
বিকল হয়ে পড়া বাসগুলোর মেরামত না করাসহ দক্ষ জনবল ও উন্নত সেবার অভাব রংপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর পুরনো চিত্র। এই অবস্থার পরিবর্তন না হওয়াতে দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে এই সেক্টর। এমনটাই জানিয়েছেন রংপুরের অন্যতম শ্রমিক নেতা ও সংগঠক খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল । সাবেক এই সংসদ সদস্য, জানিয়েছেন ‘যখন যে দায়িত্বে আসেন, সেই নিজের পকেট ভারী করেন। বিভাগীয় নগরী হিসাবে রংপুরে বিআরটিসির ভালো সার্ভিস নেই। ভালো ড্রাইভার নাই, অনেক স্টাফ চলে গেছে। এখন যারা রয়েছে তারাই ধ্বংস করছে এই সেক্টরকে।
রংপুর ডিপোতে সর্বমোট ৬২টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাস বেসরকারি খাতে চলাচল করছে। বাকি বাসগুলো পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। বর্তমানে অস্থায়ী ডিপোসহ মূল ডিপোর খোলা মাঠে বিকল হয়ে পড়ে আছে ১৫টি গাড়ি।
বিআরটিসি’র বাস সার্ভিসের দুর্দশা আর বিকল হয়ে পড়ে থাকা বাসগুলোর ব্যাপারে রংপুর ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) গোলাম ফারুক বলেন, ‘সম্প্রতি দুইটি বিকল বাস মেরামত করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সব বাসের কাজ করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাসগুলোর ছোটখাটো যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর কাজ করা হচ্ছে। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। একদিনে সবকিছু করা সম্ভব না। বাজেট পাঠাতে হয়, তা পাস হয়ে বরাদ্দ আসলে তারপর মেরামত। এজন্য বিকল বাসগুলো মেরামত করতে কালক্ষেপণ হচ্ছে।
পিবিএ/মেজবাহুল হিমেল/এমএসএম