মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা: রক্তাক্ত একুশে আগস্ট সবার দৃষ্টি যখন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় নেতাদের স্মরণ করছেন ঠিক সেই মুহুর্তেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিক কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সবুজের মেয়ে ৮ বছরের শিশু সুমাইয়া অঝড়ে কাঁদছে। ৩ দিন পরেই ২৪ শে আগস্ট সুমাইয়া ৮ বছরে পা রাখবে। গত ৪ বছর ওর জন্মদিন যেন ওর কাছে অন্ধকার দিনে পরিণত হয়েছে। সবাই কাছে এসে কেঁদেছে আর বলেছে সুমাইয়ার বাবা একদিন ফিরে আসবেই। দেখতে দেখতে আজ ৪ বছরে পা রাখল।
২০১৫ সালে ১৫ই আগস্ট গাজীপুর জেলা মওনা এলাকার ড্রিম স্কয়ার রিসোট থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি আকতারুজ্জামান লাবু এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে র্যাব পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করলেও লাবু ফিরে আসলেও আজও সবুজ ফিরে আসেনি এই দাবি করেছে তার পরিবার। ইতিমধ্যেই সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে ৭ বার সাংবাদিক সম্মেলন করে তার প্রিয় সন্তানের কাছে বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সর্বশেষ ঢাকার প্রেসক্লাবে একই দাবি তুলেছেন ৩ বছর ৪ মাস যখন অতিবাহিত হয়েছিল ঠিক সে সময়। শুরু থেকেই র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবুজকে আটক বা গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু পরিবারের বিশ্বাস সবুজকে র্যাব তুলে নিয়ে গেছে। পরিবার এখনও জানে না সে কোথায় আছে। সে জীবিত না মৃত? সবুজের প্রতিক্ষায় দিন কাটছে তার স্বজনদের। পুত্র শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার বৃদ্ধ পিতা- মাতা। স্বামীর সন্ধান না পেয়ে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া পাগল প্রায়। ছেলে শেখ সাহেদ হোসেন প্রেম এবার এইচ এস সি পরিক্ষায় ঢাকার মাইলস্টন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার পরেও তার মনে কোন আনন্দ নেই। কোথায় ভর্তি হবে সেই চিন্তাও নেই। একমাত্র চিন্তা তার বাবা কবে ফিরে আসবে।
কুষ্টিয়া জেলার রাজনীতিতে শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ সকলের অত্যন্ত পরিচিত মুখ ছিল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে একের পর এক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল সবুজ। ২০১৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে এক অনুষ্ঠান ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোনদলে ঝালুপাড়ার সবুজ নামে এক যুবক নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে প্রধান আসামী করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের আর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান তার স্ত্রী। তিনি বলেন, আমার স্বামী যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাকে প্রচালিত আইনে সাজা দেয়া হোক, কিন্তু আমাদের জানামতে সে কোন অপরাধ করে নেই। তার একমাত্র অপরাধ সে নিঃস্বার্থভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিজের জীবন বাজি রেখে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে গেছেন। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলের রাজনীতিতে ছিল তখন কুষ্টিয়ার রাজনীতিতে সকল কর্মকান্ডে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমার স্বামী সবুজ। এটি যদি অপরাধ হয় আমি তার কাছে এই অপরাধের বিচার চাইব?