ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা বড় ধরনের নাশকতার চক্রান্ত এঁটে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এদেশের আইন-আদালত, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনসহ প্রতিটি সেক্টরে স্তরে-স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের দিয়ে। এরা আওয়ামী যাদুর চশমা পরে গোটা দেশকে বাকশালী কর্তৃত্ববাদের কারাগার হিসেবে দেখতো এবং জনগণকে বন্দী হিসেবে মনে করে তাদের ওপর চালাতো পৈশাচিক বর্বরতা। এই হাসিনা লীগের ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল আছে এবং বড় ধরনের নাশকতার চক্রান্ত এঁটে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দৃঢ় ও নিবিড় যোগসূত্র এখনো বিদ্যমান রেখেছে, তারা নানা ইস্যু ও কথিত দাবি তুলে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে। ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন স্থানে দখল-লুটতরাজ, চাঁদাবাজি করছে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করছে। তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার দুনিয়া কাঁপানো অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী ‘বাংলাদেশের লেডি দানব’ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে। এখন সুযোগ এসেছে দেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনপ্রত্যাশা পূরণের জন্য অতীতের সব জঞ্জালমুক্ত একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ এবং মানবিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার। আন্দোলন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি দেশ ভারতে পালিয়েছে।
পলাতক হাসিনা ও তার অবিরাম ‘ননসেন্স কথাবলার অপরাজেয় পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়’ বিদেশে থেকেই এখনো দেশে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার উস্কানি দিচ্ছেন।
রিজভী বলেন, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এখন সময় এসেছে গত ১৬ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের প্রকৃত তালিকা করে বিচার করার। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে হলে পতিত গণবিরোধী শক্তিকে আইনের মুখোমুখি করার অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। রাষ্ট্রের বিবর্তনে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাজনৈতিক সংগ্রাম বা বিপ্লবেরই ফলশ্রুতি। কোনোভাবেই বি-রাজনীতিকরণের আভাস যেন ফুটে না ওঠে।
তিনি বলেন, আমরা এখনো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে অবলোকন করছি যে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফ্যাসিবাদের আমলেরই সাজানো দুদকেরই কার্যক্রম চলছে। নির্বাচন কমিশন সেই লীগ কমিশন যারা শেখ হাসিনার অবৈধ ভোটকে ন্যায্যতা দান করেছে, ভোটারবিহীন ভোটকে অংশগ্রহণমূলক করেছে। হাসিনার প্রেতাত্মারাই বহাল তবিয়তে চেয়ারে বসে আছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও শেখ হাসিনা এগুলোকে কবজায় নিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
এ সময় রিজভী বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচিগুলো হলো-সকাল ৬ টায় ঢাকাসহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে, বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১লা সেপ্টেম্বর (রোববার) সকাল ১১টায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) কবরে দলের মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন, বাদ জোহর দলীয় কার্যালয়ের সামনে বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা এবং জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সারাদেশে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে।