ইমরান হোসাইন,কুবি: রক্তদান মহৎ একটি উদ্যোগ। মানুষকে ভালোবেসে যতগুলো কাজ করা যায় তার মধ্যে অন্যতম রক্তদান। অন্যকে রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে যেমন তার জীবন বাঁচানাে যায়, ঠিক তেমনই রক্তদান করলে নিজের শরীরেরও উপকার হয়। দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোন জটিল রােগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতাে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়ােজন হয়।
অনেকে রক্তদান করতে চান না কারণ রক্তদান সম্পর্কে অনেকেরই নানা নেগেটিভ চিন্তাভাবনা থাকে।অনেকেই রক্ত দিতে ভয় পান। তাদের মতে রক্ত দিলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। এই ভয় থেকে অনেকেই রক্ত দিতে চান না। যেমনঃ রক্তদান করলে চিকন/রােগা হয়ে যাবে, অসুস্থ হয়ে পড়বে, শরীরে রক্ত সংকট দেখা দিবে ইত্যাদি। কিন্তু রক্তদানের কোন শারীরিক ক্ষতি হয় না বরং রক্তদান করলে আপনার অনেক উপকার হবে।
ডাক্তাররা বলেছেন, একজন সুস্থ্য মানুষের দেহে সাধারণত ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদানের সময় সেখান থেকে নেয়া হয় মাত্র সাড়ে ৩শ’ এমএল। আর দানকৃত রক্তের প্রায় ৬০ ভাগ ১ দিনের মধ্যেই শরীর তৈরি করে নেয়। শুধু রক্তের লােহিত কণিকা পূরণ হতে ১২০ দিন বা ৪ মাস সময় লাগে। তাছাড়া শরীরের এই লােহিত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। তাই আপনি যদি রক্তদান নাও করেন আপনার এই লােহিত রক্ত কণিকার ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে শরীরের অন্যান উপাদানের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাবে।
প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতার অস্থিমজ্জা (Bone marrow) নতুন রক্ত কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। ফলে রক্তদানের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। রক্তদানের ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের
এর পরিমাণ কমে, ফলে আপনার হৃদরােগের সম্ভাবনা ৩৩ ভাগ কমে যাবে। রক্তদানে শরীরের ঋৎবব ৎধফরপধষং এর পরিমাণ কমে যায় তাই বার্ধক্যজনিত জটিলতা দেরিতে আসে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার প্রতিরােধে সহায়ক নিয়মিত রক্তদানে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা এখনাে নগণ্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বছরে আট থেকে নয় লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি। এছাড়া সংগ্রহকৃত রক্তের মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে। নিজের পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন না হলে এখনাে বেশিরভাগ মানুষ রক্তের জন্য নির্ভর করেন পেশাদার রক্তদাতার ওপর। রক্তের অভাবের কারণে প্রতিবছর বহু রােগীর প্রাণ সংকটের মুখ পড়ে। এক ব্যাগ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট। এই অল্প সময়ে চাইলেই একজনের প্রাণ বাঁচানাে সম্ভব। তাই এই দেশে রক্তের অভাবে যেন একটি প্রাণও ঝরে না পড়ে সেই লক্ষকে সামনে রেখে রক্তদানে এগিয়ে আসুন।