রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে মানুষের পাশে আত্মীয়

পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অসুস্থ মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচান আত্মীয় । সকাল, বিকাল, রাত্র বলতে তাদের কাছে কিছু নেই। রক্তের প্রয়োজনের খবর পাওয়া মাত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তারা ছুটে যান সংগঠনের লোকজন। ওরা হচ্ছে সমাজের আলোকিত মানুষ, রক্ত যোদ্ধা, প্রাণ বাঁচার সাথী। মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়ে রক্ত দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তাদের একমাত্র নেশা। গত দু বছরে ৪১৭ জনের উপর রোগীকে রক্ত দিয়ে তারা প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আত্মীয় নামক সেচ্ছা সেবক সংগঠনটি গড়ে উঠেছে। রক্তদানের পাশাপাশি তারা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এই সংগঠনটি জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

দেখতে দেখতে আত্মীয় নামে সংগঠনটি তৃতীয় বৎসরে পর্দাপন করেছেন। এ উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘প্রকৃতি উৎসব’ নামে এবারের আয়োজনের মধ্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ফলের বাগান গড়ে তোলাসহ নানা কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
আত্মীয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত দুই বছরে এই সংগঠনের সদস্যদের রক্ত পেয়েছেন গর্ভবতী মা,ক্যান্সার আক্রান্তরোগী, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন রোগী। এ পযর্ন্ত মোট রক্ত দেওয়া হয়েছে ৪১৭ জনের উপর রোগীকে। সংগঠনটির মোট নিবন্ধিত রক্তদাতা হচ্ছে ১০১৫ জন। এ বাইরেও আত্মীয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই রক্ত দিয়ে থাকেন। ফেসবুক ফ্রেন্ড রয়েছে ৬ হাজারের উপরে । দিন দিন বাড়ছে সদস্য সংখ্যা। মূলত এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক হচ্ছেন ব্যাংকে কর্মরত সমীর চক্রবর্তী। এছাড়া শাহবুদ্দিন বেগ শাপলু, শেষ দীপু, সুজন সাহা, এম আর আই রাকিব, রাকিবা হাবিব অয়ন, হৃদয় দেব, সুদীপ্ত সাহা, কিবরিয়া, মমতা ঘোষ মণিসহ ২০-২৫ জন সদস্য সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। রক্তদানের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড করছেন আত্মীয়। প্রায় প্রতিমাসেই ‘আত্মীয় আড্ডা’ নামে আয়োজনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই আড্ডায় রক্তদানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার আলোচনাসহ গান, কবিতার আয়োজন করা হয়।

আত্মীয়’র সদস্য ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা রক্তদানের। কিন্তু সঠিক কোনো পথ খোঁজে পাচ্ছিলাম না। সেই পথ দেখায় ‘আত্মীয়’। শুরু করি রক্ত দেয়া। গত দুই বছরে পাঁচবার রক্ত দেওয়া হয়। প্রতিবারই দেখেছি রক্তগ্রহীতাদের সেকি আবেগ এইটুকু রক্তের জন্য। আত্মীয় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেটা দেখে সত্যিকার অর্থেই মন জুড়ায়, মুগ্ধ হতে হয়। তিনি আরো বলেন শরীরে কোন অসুবিধে হয় নি। রক্ত দিতে পেরে খুবই ভাল লেগেছে। ‘সংগঠনটি এখন গণমানুষের সংগঠন হিসেবে পরিণত হয়েছে।

আখাউড়ার রাধানগরের রাজীব সাহা বলেন ‘আত্মীয় নামে সংগঠনটিকে যে সত্যিকার অর্থেই মানুষকে বাঁচাতে কাজ করে সেটা আমরা বুঝেছি। হাসপাতালে আমার বোনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ৪ ব্যাগের রক্তের প্রয়োজন। কোন উপায় না পেয়ে আত্মীয় এর সাথে যোগাযোগ করা হলে এক ঘন্টারও কম সময়ে আমার বোনের জন্য চার ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয় তারা। এখন থেকে যদি কারো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে আমি যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন ছুটে যাবো। পৌর শহরের রাধানগর এলাকার ব্যবসায়ী দুলাল ঘোষ জয় বলেন, স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। অনেক চেষ্টা করে রক্তের সন্ধান না পেয়ে মোবাইল ফোনে এই সংগঠনের লোকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা রক্ত দিয়ে আমার স্ত্রীর জীবন বাঁচান। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

আত্মীয়ের সদস্যরা জানান, মাসব্যাপি প্রকৃতি উৎসব উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফলের বাগান তৈরি করা হবে। তাছাড়া বৃক্ষরোপন এবং বিতরণ করা হবে। বিনামুল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয় কার্যক্রমও চলমান থাকবে।
’আত্মীয়’র প্রধান সমন্বয়ক সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বয়ে আত্মীয় এখন অনেক সমৃদ্ধ একটি সংগঠন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে যেভাবে এগুতে চাই সেটা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে এলাকার মানুষের ব্যাপক সাড়ায়।’

আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ‘আত্মীয় সত্যিকার অর্থেই স্বার্থহীনভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করছে। একদল তরুণ যে কাজটি করে যাচ্ছে তা সত্যিই অনেক গর্ব করার মতো। আত্মীয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে একদিন রাত ১২টার পর আমিও ছুটে যাই রক্ত দিতে, যা আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের মনে হয়েছে। আত্মীয়ের যে কোনো প্রয়োজনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

পিবিএ/কাজী সুহিন/এসডি

আরও পড়ুন...