রক্ত বর্ণে রঙিন ইবি ক্যাম্পাস

নাজমুল হুসাইন,ইবি প্রতিনিধি: কাঠ ফাঁটা রোদ আর তপ্ত বাতাস উপেক্ষা করে, প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। পরিবেশের রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরছে আপন মহিমায়। অবাক দৃষ্টিতে সবাই চেয়ে থাকে, আর এই ফুলের নিবীড় সৌন্দর্য উপভোগ করে। লাল রঙের হাজারও পসরা যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ পাতার মাঝে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে।

এর ব্যতিক্রম নয় দক্ষিণ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)। ক্যাম্পাসের নানা স্থানে উঁকি দিয়েছে আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়া। নজরকাড়া ফুলের বর্ণিল সাজে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস। প্রকৃতির এমন উপহার যেন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে এনে দিয়েছে স্বস্তির ছাপ। এজন্য তারা ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে, একটু শান্তির পরশ পেতে চলে আসে গাছের ছাঁয়ায়। কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে যায় দৃষ্টিনন্দন ফুলের সাথে ছবি উঠাতে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের সামনের গাছটি যেন ফুলের ডালি। চারিদিকে গোল বসার জায়গা আর মাঝখানে বৃহৎ এ গাছটি অন্যরকম প্রশান্তির বার্তা বহন করে। এ গাছের তলায় বসে কত ছাত্রী নিজেদের মনের অব্যক্ত কাব্য রচনা করেন। কেউ কেউ ভালোবেসে চুলের খোপায় ফুলগুলো গুঁজে দেয়। আবার কেউ কেউ ফুলকে সাক্ষী রেখে কিছু ছবি সংরক্ষণ করে রাখে।

জানা যায়, কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়াও দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচুড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়।

কৃষ্ণচূড়ার এমন বাহারি রূপে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন,

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরী কর্ণে
আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে।’

খরতাপ রৌদ্দুরে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতির সাজ সাজ রব আমাদের এক অপার প্রাপ্তির কথা বলে। মনে এক অনাবিল সুখ এনে দেয়। রুক্ষতা, ভ্যাপসা গরম আর ধুলোবালির বাইরে ক্যাম্পাসের এ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে এক প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়া যায়, কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে।

 

আরও পড়ুন...