পিবিএ, ঢাকা : আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সার্বিক আইনূশৃঙ্খলা ও করোনা সংক্রান্তে আইজিপি’র নির্দেশনা দিয়েছেন।
আইজিপি আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হতে ভিডিও কনফারেন্সে সকল রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে আসন্ন পবিত্র রমজানে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেছেন, এবার আসন্ন পবিত্র রমজান একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে পালিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সীমিত রয়েছে। রমজানে ধর্মাচার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন কোন কারণে পণ্যের মূল্য না বাড়ে। পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, পণ্যের পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক জেলায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। আসার সময় ওই ট্রাকগুলো খালি ফিরে আসছে। ওই খালি ট্রাকগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। রিলিফ ও টিসিবি পণ্য এবং ভিজিএফ ও ওএমএস সুবিধা যেনো জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁঁছায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।
হাওরে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, হাওরে হয়তো আরো শ্রমিক পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। তিনি শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার জন্য শ্রমিকবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার এবং গাড়িতে শ্রমিকদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বার রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
কোন ব্যক্তি বা সংগঠন অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অথবা ইফতার বিতরণের নামে জনসমাগম না করেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, ত্রান বিতরণে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রমজানে যেন কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
আইজিপি বলেন, কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে অনেকের লকডাউন ভাঙ্গার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া, দেশের ৫টি বিভাগে চিকিৎসার আয়োজন করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সকল পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে,
আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন তিনি। তাদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থা করার জন্যও নির্দেশ দেন আইজিপি। তিনি বলেন, শুধু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের নয়, তাদের পরিবারেরও খোঁজখবর নিতে হবে, যেন তারা নিজেদের একা মনে না করেন।
আইজিপি বলেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রান্তিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বাড়তে পারে। এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করছে, পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। এ অর্জন কোনভাবেই ম্লান হতে দেয়া যাবে না।
আইজিপি বলেন, কেউ যেন ধর্মীয় উস্কানি, গুজব এবং করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জঙ্গিরা যেন কোনভাবেই কোন তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও যেসব গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন তাদের প্রতি আইজিপি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। আর যারা এখনও বেতন দিতে পারেননি, তাদেরকে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কোন গার্মেন্টস চালু করলে যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার পরামর্শ দেন আইজিপি।
পিবিএ/প্রেসবিজ্ঞপ্তি