পিবিএ ডেস্ক: রমজান মাসে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। সারাদিন যেহেতু না খেয়ে থাকতে হয় তাই কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। রোজা ভালোভাবে পালনের জন্য রমজান মাসে সুস্থ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু, গ্রীষ্মের এই সময়ে দিন বড় হওয়াতে দীর্ঘক্ষণ রাখতে হচ্ছে রোজা। তাই দিনের অনেকটা সময় আমাদের না খেয়ে কাটাতে হয়। এই না খেয়ে কাটানো সময়ে শরীর তার সংরক্ষণকৃত কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থেকে এনার্জি নিয়ে কাজ সঞ্চালন করে থাকে। এক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চালনের জন্য সঠিক খাদ্যভাস মেনে চলা খুবই জরুরী। তাই জেনে রাখা দরকার রমজান মাসে সুস্থ থাকা নিয়ে কিছু টিপস।
স্বাস্থ্যকর সেহরি ও ইফতার
ইফতার এবং সেহরিতে সবরকম খাদ্য উপাদান রাখা জরুরী। তবেই স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা পালন সম্ভব। প্রায়ই আমরা ইফতারের পর যেকোন খাবারে না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ি। খেয়ে ফেলি এমন অনেক খাবার যা আমাদের শরীরকে করে তুলে দুর্বল। ইফতারের পরে এবং সেহরির আগে আমরা অনেক ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলি। প্রচুর পরিমাণে খাবার এবং অস্বাস্থ্যসম্মত খাবার শরীরে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং পেটে গ্যাস্ট্রোনমিক্যালের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। যার ফলে রোজার দিন গুলো হয়ে উঠে বিষাদময়। সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিকোণ থেকে রোজা পালন করা সম্ভব। এই রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস আপনাকে দিতে পারে বাড়তি সতর্কতা।
সেহরিতে কী খাওয়া উচিৎ
সেহরির খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ প্রোটিন সমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত, সুষম ও দ্রুত হজম হয়ে যায় এমন খাবার
দিন এখন অনেক বড় হয়েছে তাই দীর্ঘক্ষণ রাখতে হচ্ছে রোজা। আর দিনের শুরু হয় সেহরি দিয়ে। সেহরির খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ প্রোটিন সমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত, সুষম, দ্রুত হজম হয়ে যায় এমন খাবার। সেই সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়া, যাতে করে সারা দিন আপনি হাইড্রেটেড থাকতে পারেন। ভাবছেন আঁশযুক্ত খাবার কোন গুলো? আঁশযুক্ত খাবার হলো গম থেকে তৈরি রুটি, শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি। আপনি চাইলে সুষম খাবারও রাখতে পারেন। যেমন ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত মাংস বা মাছ, ভাত বা রুটি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি।
সেহরিতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ
ভাজাপোড়া
সেহরিতে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেকেই আছেন যারা সারাদিন রোজা রেখে ধূমপান থেকে বিরত থাকছেন যার ফলে ইফতারের পর সেহরি অব্দি অতিরিক্ত ধূমপান করে থাকেন। এই রকম ধূমপানের প্রবণতা রোজা আসার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। রোজার সময় ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
ইফতারে কি খাওয়া উচিৎ
পরিমাণ মত পানি পান করুন
দিনভর রোজা রাখার পর ইফতারি হিসেবে বেছে নিতে পারি মৌসুমি ফলের শরবত। খেজুর খাওয়া উচিৎ, দু-তিনটির বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে সুক্রোজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। কাঁচা ছোলা ভিটামিন-সি এর খুব ভালো উৎস। প্রতিদিনের ইফতারে কাঁচা ছোলা নিশ্চিত করুন। আপনি চাইলে টাটকা সবজি দিয়ে তৈরি এক বাটি স্যুপ দিয়ে ইফতার সেরে ফেলতে পারেন। স্যুপ একদিকে যেমন পানির অভাব পূরণ করবে তেমনি এটি পাকস্থলীর জন্য উপকারী হবে। ইফতারের সাথে আপনি আরও বেঁছে নিতে পারেন সালাদ। রোজার মাসে ভাজাপোড়া এতটাই খাওয়া হয় যে শাকসবজি তেমন করে খাওয়া হয়না। তাই ইফতারে বেশি করে সালাদ খেয়ে সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেন। সবচেয়ে জরুরী যে খাদ্য উপাদান তা হচ্ছে পানি। খাবারের সমাহারে সবচেয়ে প্রথমে যা মনে আসবে তা হচ্ছে পানি। পানির কোন বিকল্প নেই, তাই যতটুক সম্ভব পানি পান করুন। এই গরম আবহাওয়ায় খেজুর, পানি, স্যুপ ও সালাদ দিয়ে করতে পারেন এবারের ইফতার।
ইফতারে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ
ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাদ্য রাখুন
যদিও ইফতারে ভাজাপোড়া না খেলে আমাদের চলেই না তবুও এটিকে পরিহার করুন। এই ভাজাপোড়ার ফলে আমাদের শরীরে চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি হয়। এছাড়া গ্যাস্ট্রোনোমিকাল সমস্যাগুলি বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি ও অসুস্থতা সৃষ্টি হয়। কফি, সোডা কিংবা চা একেবারেই এড়িয়ে চলুন কেননা ক্যাফেইন আপনার শরীরে তরল, লবণ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে না বরং অনিদ্রা এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে। প্রক্রিয়াজাত কার্বনেটেড পানীয় গুলো অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ কেননা, এতে ক্যালোরির মাত্রা থাকে অনেক, যা শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। অত্যধিক মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়িয়ে চলা উচিৎ। এই সমস্ত খাদ্য শরীরে অতিরিক্ত মেদ এবং শারীরিক জটিলতাও সৃষ্টি করে তাই এসব খাদ্য বর্জন করাই শ্রেয়। আর যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে খুবই সতর্ক থাকবেন। হুটহাট ঠান্ডা পানি দিয়ে ইফতার করবেন না। বেশি ঠাণ্ডা পানি রক্তনালি সংকোচন বাড়িয়ে হজমে সমস্যা করে। তাই এসময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন।
বলে রাখা ভালো, একেক মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা একেকরকম। তাই কোন ধরনের অসুস্থতা থাকলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আশা রাখি এই সকল রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস গুলো আপনাকে সহায়তা করবে। এবং আমি যদি কোন কিছু ভুলে যাই কমেন্টে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। সকলের রমজান মাসে সুস্থ থাকা কামনা করছি।
পিবিএ/এএইচ