মোঃ নুরুল আমিন,রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিল কৃষকরা। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সে আশা যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। কারণ সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলায় পরিবহনসহ সবধরনের ব্যবসাযী প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে ন্যায্য দাম ও বেচা-কেনা নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
সরেজমিনে রাঙাপানি এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র ফসলের মাঠ যেন সোনালী এক বিছানা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সোনালীর সমারোহ। বাতাসে মাঠে মাঠে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। চারদিকে এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। বুনানো স্বপ্নের পাকা ধান কেটে হাসি মুখে ঘরে তুলছেন কৃষকরা। তবুও তাদের কপালের মধ্যে যেন দেখা গেছে দুশ্চিন্তার বলিলেখা।
কৃষাণী শিশুবতী চাকমা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ভালো ফলন হলে কি হবে,এবছর মহামারী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হতে যাচ্ছে। কারণ সারাদেশে করোনার কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিবহনসহ সকল ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যার ফলে ধানের ন্যায্য দাম ও বেচা-কেনা নিয়ে চিন্তিত আছেন তিনি।
কৃষক নীলকুমার চাকমা জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। কৃষি অধিদফতরের পরামর্শে গত বছরের তুলনায় এবছর ভালো ফলন হয়েছে। জমির ধানগুলো সবুজ থেকে সোনালী রং ধারণ করছে। তিনি আরও জানান, কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেলে উৎপাদনের ধারা বজায় রাখবে। তাই ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও বেচা-কেনা নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
রাঙ্গামাটি সদর কৃষি কর্মকর্তা আপ্রু মারমা জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা যেন বোরো ধানের শেষে আউশ ধান ও বিভিন্ন রকমের গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ করে। তিনি আরও জানান, আউশ ধানের জন্য ২০০ জন চাষীকে সরকারের প্রণোদনা হিসেবে ধানের বীজ ও সার দেয়া হচ্ছে। যার প্রান্তিক চাষী আছেন তারা যদি তাদের উৎপাদন ঠিক রাখতে পারে,তাহলে রাঙ্গামাটিতে দানা জাতীয় খাদ্য সংকট থাকবে না বলে তিনি জানান।
রাঙ্গামাটি কৃষি অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, এবার রাঙ্গামাটিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবছর ৭ হাজার ১শত ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ১শত ৪০ হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। তবে রাঙ্গামাটিতে ধান কাটার শ্রমিকের কোন সংকট নেই। ধান কাটার জন্য বিকল্প হিসেবে রয়েছে হোন্ডা রিপার মেশিন (ধান কাটার যন্ত্র)। তিনি আরও জানান, যারা বোরো ধানের চাষ করেছে তাদের তালিকা খাদ্য অধিদফতরে পাঠানো হবে। যে কেউ চাইলে সরকারিভাবে তাদের ধান বিক্রি করতে পারবেন। ফলে ধানের দাম নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। তিনি আশা করেন, কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
পিবিএ/এমএসএম