রাজধানীতে তীব্র পানি সংকট, ওয়াসার নেই কোন উদ্যোগ

পিবিএ ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকার বাসিন্দা মো: রোকন মিয়া বলছিলেন ‘গেল টানা ১৮ দিন থেকে আমাদের এলাকায় পানি নেই। আজ সকাল ৬টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত এক ঘন্টা সামান্য একটু করে পানি এসেছে। এরপর থেকে আবারও আগের অবস্থা, পানি আসছে না।’ তিনি আরো বলেন, পানির পাম্পে গিয়ে সামান্য কিছু পানি নেই। তাছাড়া এখানে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নিজস্ব পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা আছে, তাদের কাছ থেকেও পানি চেয়ে কোনো রকম চলছি। আর খাবার জন্য বেশিরভাগ সময় পানি কিনে খাই।

মিরপুর-১৩ নম্বর এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, টানা ৮ থেকে ৯ দিন ধরে পানি নেই এই এলাকায়। পুরো এলাকাতেই নেই পানি। কোনো কোনো বাড়িতে একটু পানি আসে, তাও সঙ্গে সঙ্গে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এই রমজানে প্রচণ্ড গরমে গোসল নেই, হাতমুখও ধোয়া যায় না। হঠাৎ করে কিছু পানি আসলে সেটা অনেকটাই ঘোলা। ফলে সেই পানি দিয়ে না হয় খাওয়া, না চলে গোসল। তিনি আরো বলেন, ওয়াসায় অভিযোগ দিয়েও কাজ হয় না। আমরা তাদের কাছে গেলে উল্টো তাদের নানা সমস্যার কথা শুনতে হয়।

রাজধানীতে তীব্র পানি সংকট, ওয়াসার নেই কোন উদ্যোগ
ফাইল ফটো

ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো: আব্দুল হাকিম বলেন, আমার বাসা রাজধানীর শেওড়াপাড়ায়। সেখানে টানা ১৫ দিন ধরে পানি নেই। ভোররাতে আধাঘন্টা সময় ধরে পানি আসে, সেটা দিয়ে গোসল হয় না। বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছি। অফিস করে বাসায় গিয়ে স্বাচ্ছন্দে পানি ব্যবহার করে ফ্রেস হবো সে সুযোগ নেই।

রাজধানীর দনিয়া-কদমতলি এলাকায়ও গেল টানা ১০ দিন ধরে নেই পানি। ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রউফ পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি বলেন, ওয়াসার সাপ্লাই পানি বলতে গেলে একেবারেই আসে না। আমরা গ্যালেন দিয়ে অন্য জায়গা থেকে একটু করে পানি আনি। বেশ কয়েক দিন ধরে গোসল করা হয় না। অন্য জায়গা থেকে পানি এনে কোনরকম হাত-মুখ ধোয়ার কাজ চলে।

তিনি আরো জানান, দনিয়ার গোবিন্দপুরেও নেই পানি। সেখানকার মানুষেরও একই অবস্থা। আমরা বারবার ওয়াসার লোকদের বলেছি। তারা বলছে, গরমে প্রোডাকশন কম, তাই পানির এ অবস্থা। তারা শুধু বলে সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু আজ দশদিনেও পানি পাচ্ছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দনিয়ার গোবিন্দপুর এলাকায়ও বেশ কিছুদিন ধরে পানি নেই। রমজান মাসে এমন পানি বিড়ম্বনা সামলাতে ওই এলাকার বাড়ীর মালিকরা আজ মিটিংয়ে বসছেন। মিটিংয়ে বসে তারা করণীয় ঠিক করবেন বলেও জানা যায়।

বাড্ডা: রাজধানীর বাড্ডা এলাকার এক বাসিন্দা আহমেদ ফেরদাউস খান। তার ভাষ্য, গেল তিন মাস ধরেই এই এলাকায় ওয়াসার পানি অনিয়মিত। গত ২০ দিনে এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। আমরা অন্য এলাকা থেকে পানি এনে চলছি। গোসল করার মতো পানি নেই, যতটুকু পানি দূর থেকে আনা হয় তা দিয়ে ওজুর কাজই চলে না। ঢাকা ওয়াসার ফোন নাম্বারে বেশ কয়েকবার অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি।

লালবাগ: এদিকে লালবাগ এলাকার পানি ঘোলাটে, দুর্গন্ধযুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, একদিকে পানিই আসে না, যতটুকু আসে তাও ঘোলা এবং দুর্গন্ধময়। ফলে আমরা সেই পানি দিয়ে কোনো কাজই করতে পারছি না। পানিতে হাত দিতেই ঘৃণা হয়।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যা বলছে: এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক, টেকনিক্যাল একেএম শহীদ উদ্দিন বলেন, আপনারাও দেখছেন, কতটা গরম পড়েছে। এখন পানির চাহিদা একটু বেশি। তবে আজকালের মধ্যে বৃষ্টি হলে চাহিদা কমে গেলে স্বাভাবিক হবে।

কিন্তু রাজধানীর কোথাও কোথাও দীর্ঘ টানা ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পানি নেই। এ প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, দেখুন এসব বাসায় সাতদিনও পানি না থাকলে চলে ক্যামনে? অভিযোগ করা আমাদের অভ্যাসই। আর আমরাওতো কাজ করছি, বসে থাকি না।

পানির সংকটের কারণ জানতে চাইলে ওয়াসার এ কর্মকর্তা বলেন, গরমের কারণে পানির প্রোডাকশন কমে যায়, পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়। এর চেয়ে বড় হচ্ছে গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। মানুষ গরমে সকালে একবার বিকেলে আরেকবার গোসল করে। এভাবে সার্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। ‘ওয়াসা বলে দেখছি সমাধান হবে’

এদিকে নিরাপদ পানি আন্দোলনের মুখপাত্র মো: মিজানুর রহমান বলেন, দেখুন রাজধানীর জুরাইনে আমাকে আজ সকালে এক ব্যক্তি বললেন, আমাদের এ এলাকায় পানির ভয়াবহ সমস্যা বিরাজ করছে। এর কোনো উন্নতি নেই। তিনি ওই এলাকায় ৪০ বছর যাবৎ অবস্থান করছেন।

মিজানুর রহমান বলেন, ওয়াসার পক্ষ থেকে যেসব কথা বলা হয়, যেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, অথবা দেখছি, সমাধান হয়ে যাবে। এসব তাদের দুর্বল কথা। এসব বলে তারা পার পেতে পারে না। অনেক সময় মানুষের আন্দোলনের চাপে তারা পানি সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এর কোনো সমাধানই করছে না।

 

পিবিএ/আরআই

আরও পড়ুন...