রাজন্য রুহানি’র কবিতাগুচ্ছ

❑ মানুষ এখন

মানুষ এখন ভুলে গেছে কোলাকুলি।
মানুষ এখন ভুলে গেছে গলাগলি।

মানুষ এখন মানুষেরে ভয় পায়।
মানুষ এখন আর তো মানুষ নাই।

পোষা প্রাণি শুধু কাছে ঘেঁষে।
প্রাণিরা ইদানিং মানুষেরে খুব চেনে।
পোষা মানুষেরা ছেড়ে যায় অবশেষে,
মানুষই মানুষের শত্রু, এই জেনে
মিত্রতা মমতা ভুলে যায়।
মানুষ এখন সেই মানুষটি নাই।

মানুষ এখন নিজ খোঁয়াড়ে হাট্টিমাট্টিম টিম।
মানুষ এখন ফেলে গেছে আলাদীনের পিদিম।

মানুষ এখন ভয়চিহ্নে আঁকছে অপর বাড়ি।
মানুষ এখন সামান্য মানুষ আর শূন্য হাড়ি।

❑ শেয়াল ও ছায়া

একটা ছায়াকে দীর্ঘ হতে দেখে ঠোকর মারল রাজহাঁস। গলায় বিঁধল যমকাঁটা।

যে বকটা ছুটে এলো, তার শর্ত মেনে নিলে জলাশয় বেদখল। সহচর পাখিদের মধ্যে মাছরাঙা ভেটো দিল। সে ছায়ার প্রার্থনা করলো মহাভোজে বক এবং ডাহুকেরে বলি দিতে। রাজহাঁস প্যাঁকপ্যাঁক করতে থাকল কিন্তু যে শব্দ বের হয়ে এলো তা চিঁউচিঁউ।

ছায়াটা আগুন নিয়ে ফিরে এলো হাঁসকে রান্নার জন্য, তার আগেই শেয়াল উপস্থিত, সে-ই ছায়াকে টোপ হতে শিখিয়েছিল।

❑ গণতন্ত্রের চশমা

গৃহপালিতের দিকে চেয়ে থাকে লোভী জিহ্বা। লালা ঝরানোর আগে রান্নার রেসিপি সাজানো মানুষ নোনাঘামেরও কর দেয় সাধ করে মাথায় উঠানো বাঁদরকে।

রাখালকে রোজ খাবারদাবার দিয়েও বেতন দিতেদিতে পারিবারিক স্বাস্থ্যটা ভেঙেচুরে যায়। কোরবানির ঈদে সেই লগ্নি হস্তান্তর করতেই কিছু রক্ত চুষে নেয় জোঁক। তবুও ঘোরের জ্যামিতিক বৃত্তে আমরা উঠোন আঁকি।

বনে এ আইন নেই পরধনে পোদ্দারি করার। বনেবনে তবু মাংসাশীর চলে শক্তির মহড়া। তৃণভোজীর সান্নিধ্যে ঘন হয়ে বসে থাকা রোদ দেখেদেখে মানুষের সভা আর সংঘের ভেতর সাধুর নজরে উড়াই শুভঙ্করের ঘুড়ি। শান্তি আর সংহতির ওমেওমে রাখি ছাইচাপা আগুনের তেজ। অথচ ভেতরে খেলা করে অসুরচালাকি।

ঝড়ের সামনে ওড়ে তোমাদের বস্ত্র। বন্যার করাল স্রোতে ভেসে যায় সুনিপুণ চোখ। আগুনের ঠোঁটেঠোঁটে নিভে যায় ধর্মের পতাকা।

এতসব ভেল্কিবাজি শিখেশিখে নাকে বসে দুই হাতে কান ধরে বেড়ে ওঠে গণতন্ত্রের চশমা।

❑ ভালোবাসার চ্যানেলে হরর সিনেমা

বিপন্ন দিনের কাছে মানুষের ভাঙাচোরা মুখ।
মানুষেরা মানুষের কাছে এসে ভেঙেভেঙে যাচ্ছে।
নদীর মতন এ ভাঙন, মেরামত ফেলে পালাচ্ছে মিস্ত্রিরা,
আরো ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন ঘর থেকে ঘরে।

যে তুমি সামনে এলে মুছে যেত উত্তর শিথান,
যে তুমিই ছিলে সাহসের দেবী,
এখন তোমাকে দেখলেই চোখজুড়ে নামে ভয়।
আমার ভূগোল ঘিরে তোমারও শঙ্কা আর অবহেলা।
ভালোবাসার শহরে বন্দরে চলছে আজ হরর সিনেমা।

আমি তবে কার কাছে যাই?
মানুষ দেখলে মানুষেরা ফিরে যাচ্ছে ঘরে,
দরোজায় দরোজায় লেখা প্রবেশ নিষেধ।
চারদিকে চাপাকান্না শোনে
হাসছে কবর।

মানুষের বিপদে রোবট সেজে দাঁড়াচ্ছে মানুষ।
মানুষের বিপদে এখন সেই মানুষেরা নেই।
মানুষের বন্ধু এখন নিরব অশ্রু।

❑ সমস্যা ও প্রকল্পচাতুরি

কেটেকুটে শেষ করে দিচ্ছে ইঁদুরেরা।

হকারবালক এলে অভিযোগ দেই
বিফলে মূল্য ফেরত, তুমিই তো বলেছিলে?
হকার বলে— এইবার ফাটক কিনের স্যার
শুঁটকি কিংবা আলু দিয়া পাতেন,
ছোট ইঁদুর, বড় ইঁদুর, মন্ত্রী ইঁদুর, রাজা ইঁদুর
সব ধরা খাবে।

ফাটক পাততে গিয়ে শেষমেশ আঙুলটাই গেলো।
ডাক্তার-ওষুধে দৌড়াদৌড়ি
বেহুদা খরচা,
উৎপাতও বেড়েই চললো।

প্রাণিসম্পদ অফিসার বলে— বিড়াল পোষেন মিয়া,
জানেন তো, ইঁদুর আর বিড়ালে চিরকালীন শত্রুতা?
বিড়ালেই ইঁদুর মারুক,
আপনারও থাকবে না হত্যার দায়।

বিড়ালের কথা ভাবতেই হাড়ির ডরে কেঁপে ওঠে কর্তা।

আরও পড়ুন...