পিবিএ,রাণীশংকৈল: উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন..“শস্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল”।
বাংলাদেশে আবাদী-অনাবাদী দুই ধরনের কৃষি উৎপাদনেই নারীরা সরাসরি ভূমিকা রাখছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত নারীকে ঘরের কাজও করতে হয়, কিন্তু পুরুষকে তা করতে হয় না। এ কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও কৃষি দপ্তর সহায়তায় সপ্তাহে একদিনের প্রশিক্ষণে বাড়ির আঙ্গিনায় ছেঁড়া বস্তা আর অব্যবহৃত ব্যাগে আদা চাষ করে আলোরন সৃষ্টি করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের কয়েকশ পরিবার । পরিবারের চাহিদা পূরণ করে পরিবারে বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে ৪/৫টি প্লাস্টিকের বস্তা/ব্যাগে মাটি ভরে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে জেলার রাণীশংকৈলের কৃষক-কৃষাণীদের মাঝে। একেকটি বস্তা থেকে ২-৩ কেজি আদা পাওয়ায় বস্তায় আদা চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে উপজেলা জুড়ে । তাদের এই চাষ পদ্ধতিতে আগ্রহ জন্মিয়েছে উপজেলা কৃষি দপ্তর।আর এ বস্তায় আদা চাষ করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন গৃহকর্তাসহ গৃহিণীরা ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ এর নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের ভবান্দপুর, বলঞ্চা, হোসেনগাঁও,নরগাঁও, মুনিষগাঁও ,মাধবপুরসহ এ রকম ১৫ টি এলাকায় গড়ে ওঠেছে ১৫ টি কৃষক মাঠ স্কুল। একেকটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে ২৫ সদস্যে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একেকটি স্কুল। আর এই ১৫ টি কৃষক মাঠ স্কুলকে দেখাশোনা করছে ৬ জন ফার্মারস ফ্যাসিলেটর।
ভবান্দপুর কৃষক মাঠ স্কুল সদস্য মামুনুর রশিদ এবং তার স্ত্রী রুনা আক্তার বলেন , কৃষি অফিস ,উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আমাদের স্কুলের ফার্মারস ফ্যাসিলেটর এর সহযোগীতায় বস্তায় আদা চাষ করি । ৮ টি বস্তার মধ্যে ৩-৪ টি আমার(স্বামী) ভুলের কারণে নষ্ট হলেও বাকি বস্তার আদাগুলো অনেক ভালো হয়েছে। এবং ভালো ফলন পাবো বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি। এতে করে আমাদের পরিবারে মসলার চাহিদা পূরণ হবে এবং আদা কেনার জন্য আমাদের আর অতিরিক্ত খরচ করতে হবে না। আমাদের বস্তায় আদা চাষ দেখে আমাদের আশেপাশের বাড়িগুলোতেও আদা চাষ করছে। কৃষি অফিসের এই কৃষক স্কুলের সদস্য হয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
হোসেনগাঁও এর আরেক সদস্য বলেন,আমরা যে বস্তায় আদা চাষ করছি এর জন্য আমাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছেনা । কিছু অল্প টাকায় বাজার থেকে আদা কিনে বস্তায় চাষ করছি। কয়েক মাসের মধ্যে আমরা বস্তা থেকে কেনা আদা’র চেয়ে কয়েকগুন বেশি আদা পাচ্ছি। এতে আর্থিক ভাবে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি।
ফার্মারস ফ্যাসিলেটর আব্দুর রহমান জানান, আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ স্যারের নির্দেশে আদার উপরে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেই। তিনি আরোও বলেন আমার আয়ত্তে¦ ৫ টি স্কুল রয়েছে আর একেকটি স্কুলে ২৫ টি পরিবার এতে ১২৫ টি পরিবারে আদা চাষ হচ্ছে তাদের দেখে পাশ্ববর্তী পরিবারগুলো বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ জন্মাচ্ছে এবং চাষ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ জানান, মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। রান্নার মসলা,ভেজষ ঔষুধী গুনাগুন থাকা এবং পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয়ের জন্য আমরা প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে রাণীশংকৈল উপজেলার ২০-৩০ শতাংশ বসত বাড়িতে আদা চাষ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। এর ফল স্বরুপ প্রায় কয়েকশত বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের বাজার থেকে আর আদা ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবেনা।
পিবিএ/মো: সবুজ ইসলাম/এসডি