পিবিএ,বাগেরহাট: রাত-দিনে ছয়বার রূপ বদলায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন। এ বন জীববৈচিত্র্যের অন্যতম বৃহত্তম আধারের পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণ-প্রকৃতি দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক। গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ড’ জারি করে বন অধিদফতর।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্যুর অপারেটর ও ছোট-বড় নৌযান মালিক-শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশ অংশের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনটি সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে ২৪ ঘণ্টায় দুবার প্লাবিত হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এ জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংরক্ষিত এ বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে; যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এ ছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাই সুন্দরবনের এসব জীববৈচিত্র্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটন পিপাসু মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সুন্দরবনে বছরজুড়েই ইকোট্যুরিস্টরা আসেন। ফলে সারা বছরই বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের লোকলয় সন্নিহিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে, শরণখোলা রেঞ্জ অফিস ও সাতক্ষীরার কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। তবে সুন্দরবনে পর্যটনের ভরা মৌসুম হচ্ছে মধ্য অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও হারবাড়ীয়া, কটকা কচিখালী, হিরণ পয়েন্টে ও দুবলার চর পর্যটন এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। বন বিভাগের নিবন্ধিত ৬০টি ট্যুর অপারেটর কোম্পানি আধুনিক নৌযানে করে সুন্দরবনে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে। লোকালয় সন্নিহিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে, শরণখোলা রেঞ্জ অফিস ও সাতক্ষীরার কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রে ছোট ছোট জালিবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সারা বছর পর্যটকরা আসা-যাওয়া করে থাকেন। করোনার কারণে পর্যটন বন্ধ থাকায় সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্যুর অপারেটর ও ছোট-বড় নৌযান মালিক-শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন ট্যুরিস্ট ক্লাবের নির্বাহী আবদুল্লাহ বনি।
সুন্দরবনের পর্যটনশিল্পে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখন বেকার। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, পর্যটন মৌসুমে তার পর্যটন কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এসে থাকে। এ কেন্দ্র লোকালয় সন্নিহিত হওয়ায় অফ সিজনে গড়ে প্রতিদিন ভ্রমণ করতে আসেন ২০০ পর্যটক। দিনে জনপ্রতি দেশি পর্যটক ২৩ টাকা ও বিদেশি পর্যটক ৩৪৫ টাকা রাজস্ব দিয়ে এ কেন্দ্রটি বন্যপ্রাণীসহ সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি দেখতে পারেন। বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করে থাকে। গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ড’ জারির পর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সব ধরনের পাহারা জোরদার করা হয়েছে।
পিবিএ/শেখ আহসানুল করিম/এএম