ইছা হক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ”ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন (ফোরআইআর) চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফোরওয়ার্ড: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ ’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২২ জুন) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (বিমক) আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালাটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্বাগতিক হিসেবে অংশ নেয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিমক এর সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এছাড়া অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিমক’র সচিব ড. ফেরদৌস জামান।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান সৃজন ও এর চর্চা এবং উদ্ভাবনী গবেষণার উৎসস্থল। জ্ঞানই উন্নয়নের চাবিকাঠি। আমরা আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশীদার হতে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই বিপ্লব ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং অজান্তেই আমরা এতে ঢুকে পড়েছি।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে নানাভাবে বিশ্বের সকলক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং আগামীতেও এই প্রভাব অব্যাহত থাকবে। আমরা জানি প্রযুক্তি এক বিষ্ময়কর শক্তি। এই প্রযুক্তির ফলেই আজ বিশ্বে অভাবনীয় সব উদ্ভাবন ও প্রয়োগ হচ্ছে যা অতীতে আমাদের জন্য অকল্পনীয় ছিলো। এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশীদার হতে হলে আমাদের প্রযুক্তির অন্দরমহলে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য অন্যান্য বিষয়গুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের কৃতবিদ্য শিক্ষক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবীরা সেই লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আজ আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ ও কাজ করে যাচ্ছি যা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা। এমন অভূতপূর্ব পরিবর্তন আমরা ইতিপূর্বে প্রত্যক্ষ করিনি। আগামী বিশ বছরে যে উন্নীত ঘটবে তা সমাজের সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করবে। আজকের বিশ্বে ন্যানো ও ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এমন সব উদ্ভাবন হচ্ছে যা এক অমিত বিষ্ময়।
উপাচার্য প্রসঙ্গক্রমে মরহুম জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে উদ্ধৃত করে বলেন, “আমার পরবর্তী প্রজন্ম আমাকে যে প্রশ্ন করে তার উত্তর আমার কাছে নেই”। এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, যেভাবে প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব এগিয়ে চলেছে তার সাথে তালমিলিয়ে না চললে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখন থেকেই এই বিপ্লবে অংশীদার হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথরেখা নির্ধারণ করতে হবে। সেই লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অর্থ মঞ্জুরী বাড়ানোসহ যুগোপযোগী বিষয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা ও উদ্ভাবনী গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও সরকারের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান জানান।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যতম অনুষঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরলসভাবে সম্পৃক্ত হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নসহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মাধ্য উন্নত বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারবো।
এদিকে কর্মশালার দুটি কারিগরি সেশনে রিসোর্স পারসন হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর কাজী মোহাইমেন-উস-সাকিব ‘কহড়ষিবফমব উড়সরহধঃবং ঃযব চবৎরড়ফ ড়ভ ৪ওজ (অও, ঘধহড় ঞবপযহড়ষড়মু, ইরড়- ঝপরবহপবং ্ জবষধঃবফ অৎবধং)’ এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুলের অধিকর্তা প্রফেসর আফরোজা পারভীন ‘ঈযধষষবহমবং ড়ভ ৪ওজ ্ ঃযব ডধু ঋড়ৎধিৎফ’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তৃতা করেন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ রাবির উপ-উপাচার্যদ্বয়, রেজিস্ট্রার, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশিষ্ট শিক্ষক ও পেশাজীবীগণ।