রাবিতে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক

মনির হোসেন,রাবি (রাজশাহী): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কবরস্থান, যেখানে শায়িত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুণী শিক্ষক। সেখানেই বসে নিয়মিত মাদকের আড্ডা। এমনকি জুয়ার আসরও।
নির্জনতাকে পুঁজি করে স্থানীয় মাদকসেবীরা পবিত্র এই স্থানটিকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করলেও সেটি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বের দেয়াল ঘেঁষে যথারীতি আস্তানা গেড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করছেন তারা। বড় আকারে গর্ত করে মাদকদ্রব্যের উচ্ছিষ্ট রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে। ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবা সেবনের নানা উপকরণে ভর্তি সেই গর্ত।
প্রতিদিন সন্ধা গড়ালেই শুরু হয় তাদের এসব কর্মকান্ড এবং চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত । শুধু মাদক নয় সেখানে প্রায় সময় অনৈতিক কার্যক্রমের ঘটনাও ঘটতে দেখেছেন স্থানীয় লোকজন।

কবরস্থানে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা বলেন, জায়গাটি খুবই ভয়ংকর যেজন্য তারাও সেখানে যান না ছিনতাইয়ের ভয়ে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কবর জিয়ারতে আসলে তারা বিষয়টি অবহিত করেন। পরে প্রশাসন পুলিশের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
তারা আরো বলেন, কবরস্থান মসজিদে প্রায়শই চুরির ঘটনাও ঘটছে। দু-একদিনের মধ্যে জুতা চুরি হয়েছে এবং মাঝে মাঝে সাইকেলও চুরি হয় বলে তারা মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বহিরাগত লোকজন গ্রুপ আকারে প্রতিদিন রাত ৭-৮ টার দিকে এখানে এসে মাদকের আড্ডা বসায়। প্রায় সারারাত চলতে থাকে এমনসব আড্ডা। লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলাও চলে এই পবিত্রস্থানে। এমনকি মাঝে মাঝে নারী নিয়েও তাদেরকে আসতে দেখেন তিনি। এই নির্জন জায়গায় প্রতিনিয়তই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ তার।

বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে এমন মাদকের আড্ডার ব্যাপারটি “দুঃখজনক” জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান যাকে রক্ষা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছে করলে দুদিনের মধ্যেই মাদকমুক্ত করতে পারে। এতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় রয়েছে যাদের সাথে প্রশাসনের হাত আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের দায়িত্বের অবহেলার কারণেই এসব মাদকসেবীরা সেখানে মাদকের আস্তানা গেড়ে বসেছেন। তারা কবর বাসীর নিরাপত্তাটুকুও দিতে পারছেনা বলে তার অভিযোগ । এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থান আমাদের সম্পদ এবং তাকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। তাই প্রশাসনে উচিত সেই জায়গাগুলোকে মাদকমুক্ত করা।

কবরস্থান নিকটবর্তী চন্দ্রিমা থানার পুলিশ পরিদর্শক এমরান হোসেন বলেন, আমাদের কাছে মাদকসেবন ও জুয়ার আসর সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য আসেনি সেজন্য আমরা এ বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি বলে তিনি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, কবরস্থানের এমন অপকর্ম সম্পর্কে আমরা জানতাম না জানতাম না তবে আজকে ঘটনাটি শুনেছি এবং অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো.সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর ছিনতায়ের ঘটনা ঘটায় আমরা সকল স্থান নিয়ে সচেতন আছি এবং সর্বাত্বকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এলার্ট জারি করেছি এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত লাইট, সিসি ক্যামারা এবং পুলিশ মোতায়েনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তিনি জানান।

পিবিএ/জেডএইচ

আরও পড়ুন...