ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ এবং শপথ লঙ্ঘনের শামিল বলে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এ কথা বলেন। এ সময় আরেক উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আড়াই মাসের মাথায় ১৯ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন; কিন্তু তাঁর কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। এই কথোপকথন পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা আরও বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।
একই দিনে অবশ্য বঙ্গভবন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচার চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর উত্তর আপিল বিভাগের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন আইন উপদেষ্টার এই বক্তব্য সরকারের কি না—জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, আইন উপদেষ্টা যা বলেছেন, সেটির সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে। তাহলে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ভবিষ্যতে চিন্তা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সেটা ভবিষ্যতেই বলা যাবে।