রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বত্র দুর্নীতি-লুটপাট হচ্ছে

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাতেই সর্বত্র দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা। তারা বলছেন, দুর্নীতি ও লুটপাট প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত রূপ নেয়ার সম্পূর্ণ দায় বর্তমান সরকারের।

শনিবার (৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের গতিমুখ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় নেতৃবৃন্দরা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে এবং তারা রাষ্ট্রের প্রযোজনায় সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে এক মহাদুর্নীতির যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতকারীদের অর্থ লুটে নেয়ার জন্য। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে বিদ্যুৎ সংকটকে পুঁজি করে এ খাতে লুট ও দুর্নীতি নিশ্চিত করার জন্য আইন করে কয়েকটি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের পকেট কেটে ভর্তুকির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দেয়া হচ্ছে সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু কোম্পানি হাতে। তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য দায়মুক্তি আইন পর্যন্ত করা হয়েছে।

তারা বলেন, বলা হচ্ছে, বেনজীর (বেনজীর আহমেদ) বা আজিজের (আজিজ আহমেদ) দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠান কিংবা ঐ বিভাগ নিবে না। কিন্তু সরকারের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আজিজ-বেনজীরদের স্বেচ্ছাচারিতার ব্লাঙ্ক চেক দেয়া হয়েছে। এদের নেতৃত্বে যেভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে পুরো বাহিনী অকার্যকর হয়ে পরেছে।

একইভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে দেশকে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, সরকার গণমাধ্যমে চমক দেয়ার জন্য এবং জনগণের সামনে আই ওয়াশ হিসেবে কিছু দুর্নীতির বিচারের মহড়া দিচ্ছে। হাতে গোনা সরকারের সুবিধা অনুযায়ী কিছু দুর্নীতির বিচার প্রক্রিয়া চলবে। এই বিচার প্রক্রিয়া কতদিন টিকে থাকবে, সেটা নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় আছে। কেননা দুর্নীতিবাদ, মাফিয়া ও ডাকাতদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এদের সহযোগিতা নিয়েই সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে আছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্নীতিকে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে তৈরি করার দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে এবং দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। বর্তমান সরকার ভূরাজনৈতিকভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের পছন্দ অনুযায়ী এমপি নির্বাচিত হয়েছে, ভারতের চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রী পরিষদ ও সরকার গঠিত হয়েছে। এখন ভারতের অনুমতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরে যেতে হচ্ছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন ভারত ও চীনের রশি টানাটানির মধ্যে পড়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে হলে নতজানু বিনা ভোটের সরকারকে বিদায় করতে হবে। এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে এবং সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডাভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ।

আরও পড়ুন...