রায়পুরার আলোচিত নিপা হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

পিবিএ,ঢাকা: পুলিশ ইন্সপেক্টর জনাব জামাল উদ্দিন খান এর নেতৃত্বে চৌকস একটি দল দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার চরমধুয়া দড়িহাটি এলাকা থেকে গত (৮ নভেম্বর) অভিযান চালিয়ে মোঃ সুজন মিয়া(২২)-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামী মোঃ সুজন মিয়া (৯ নভেম্বর) বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে সে নিজেকে জড়িয়ে ফৌঃ কাঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

গত বছরের ৬ জানুয়ারি নারায়নগঞ্জ, ডেমরা ও মগবাজারে পরপর তিনটি অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপি ঢাকার রমনা থানার মগবাজার টিএনটি এলাকা হইতে অত্র মামলার অপর আসামী মোঃ জহিরুল ইসলাম(২০)-কে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে সে নিজেকে জড়িয়ে ফৌঃ কাঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলাটি পিবিআই নরসিংদী জেলা সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান মহোদয় দিক-নির্দেশনা দেন।

ভিকটিম নিপাকে নরসিংদীর পাশে বয়ে যাওয়া ভাসমান অজ্ঞাত লাশ হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। দায়ের করা হয় অপমৃত্যু মামলা। অজ্ঞাত লাশ হিসেবে তার সুরতহাল ও পোসমর্টেম করা হয়। অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করা হয় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহায়তায়। ফেসবুকে ছবি ও কাপড় চোপড় দেখে লাশ সনাক্ত করে নিপার পরিবার। মামলা করতে গিয়ে নানা ভয়ভীতি ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়। অবশেষে নিপার মা কোহিনুর বেগম, নিপার দীর্ঘদিনের প্রেমিক আমিরুল, তার পরিবারের সদস্য ও তার বন্ধু-বান্ধককে সন্দেহ পোষণ করে মোট ১০ (দশ) জনের বিরুদ্ধে কোর্টে অভিযোগ দায়ের করে। কোর্ট নরসিংদী সদর থানাকে এআইআর গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে মামলা রুজু হয়। প্রথমে নৌ-পুলিশের এসআই(নিঃ) মাহবুবকে তদন্ত দেওয়া হলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বাদী কোহিনুরের অনুরোধে পিবিআই নরসিংদী মামলাটি অধিগ্রহণ করে। ব্যায়াপক তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায় বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করতে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে নৌকা যোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয় ভিকটিম নিপাকে এবং হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় মেঘনা নদীর পানিতে।

আসামীদের স্বীকারোক্তি মূলক কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা জবানবন্দী মোতাবেক জানা যায় যে, অত্র মামলার আসামী আমিনুল ওরফে আমিরুলের এর সাথে ভিকটিম লিপা ওরফে নিপা আক্তারের বিয়ের অনেক আগ থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমিনুল ও নিপার প্রেমের সম্পর্ক আমিনুলের বাবা মেনে নেয়নি বরং কৌশলে আমিরুলের বাবা জাহের মিয়া নিজে ঘটকালি করে নিপাকে রায়পুরা থানাধীন বাঁশগাড়িতে বিয়ে দেয়। সেখানে নিপা এক বছর ঘর সংসার করার পর নিপার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমিনুল, নিপার স্বামীকে তাদের অতীত প্রেমের কাহিনী জানিয়ে দিয়ে তাকে ক্ষিপ্ত করে এবং নিপার স্বামী নিপাকে গালমন্দ করে ছেলেসহ বাবার বাড়ী রেখে আসে। নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে এবং নিপার কোন খোজ খবর নেয়নি। এই সুযোগে আমিনুল আবার নিপার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। আমিনুল ও নিপার পুনরায় প্রেম চলাকালে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে এবং তাদের শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে নিপার গর্ভবতী হয়ে যায়। আমিনুল নিপার বাচ্চা নষ্ট করার জন্য নিপাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় এই পর্যায়ে বাচ্চা নষ্ট করা যাবে না। তখন নিপা আমিনুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ১। আমিনুল, ২। মোঃ সুজন মিয়া, ৩। জহিরুল ইসলামসহ অন্যন্য সহযোগী আসামীদের নিয়ে নিপাকে মেঘনা নদীতে নিয়ে হত্যার করে লাশ নদীর চরের মাটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন গত বছরের ২৪ এপ্রিল এশার আযানের পর (প্রথম তারাবির নামাজ ছিল) আমিনুল, মোঃ সুজন মিয়া ও তার সহযোগী অন্যান্য আসামীরা বিয়ের প্রলোভন দিয়ে নৌকাযোগে নিপাকে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। আমিনুল, মোঃ সুজন মিয়া ও তার সহযোগী অন্যান্য আসামীরা নিপাকে নিয়ে মাঝ নদীতে গিয়ে গামছা দিয়ে নিপার গলায় প্যাচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করতঃ নৌকার কাঠ দিয়ে এলোপাথারী পিটিয়ে হত্যা করে। নিপাকে হত্যার পর তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিপার লাশ নদীর চরে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নদীতে অনেক জেলে থাকায় তারা নিপার লাশ নদীর চরে মাটি চাপা দিতে পারেনি। অবশেষে মোঃ সুজন মিয়াসহ অন্যান্য আসামীরা নিপার লাশ মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয় এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, মাটি খোরার জন্য আনা কোদাল ইত্যাদি নদীতে ফেলে দিয়ে বিনষ্ঠ করে বলে কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী মোতাবেক জানা যায়।

এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে আজ দুপুরে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স প্রেস ব্রিফিং করেন মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান পুলিশ সুপার, পিবিআই, নরসিংদী। ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...