রিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ, রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট

পিবিএ,ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেয়ার প্রতিবাদে সড়কে আন্দোলনে নেমেছেন রিকশাচালকরা। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ সড়কের বিভিন্ন অংশ অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফলে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

অবরোধে মালিবাগ-রামপুরা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক স্থবির হয়ে আছে। বিপরীত দিকের সড়ক পুরোটাই ফাঁকা, সেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন, কারণ কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে কোনো গাড়ি এমনকি মোটরসাইকেলও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে সকাল থেকেই এই সড়ক ব্যবহার করা কর্মক্ষেত্রগামী সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিড়ম্বনায়।

অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রিকশাচালকদের দাবি, প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

উত্তর বাড্ডায় সড়কে বসে অবস্থান নিয়েছেন রিকশাচালক ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়েই হুট করে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলো। একবারও ভাবা হলো না আমাদের পেট চলবে কীভাবে? তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছি। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবেই।

পায়ে হেঁটে যাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুর রহমান পিবিএকে বলেন, স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য আমারা রিকশা ব্যবহার করি সবসময়। কিন্তু আমাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা না করে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলো। লোকাল বাসে সবসময় যাত্রীদের চাপ থাকে যে কারণে মহিলা, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ ওইসব বাসে উঠতে পারে না। কিন্তু তাদের কথা না ভেবে, নতুন গণপরিবহনের ব্যবস্থা না করেই রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত গণবিরোধী।

তিনি বলেন, রিকশাচালকদের আন্দোলন, সড়ক অবরোধের কারণে সকল প্রকার যানবাহন আজ চলাচল বন্ধ আছে। যে কারণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। আবুল হোটেল থেকে পায়ে হেঁটে নতুন বাজার যাচ্ছি, অফিসে যেতে বিলম্ব হয়ে গেল। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। গতকালও একই অবস্থা ছিল। সংশ্লিষ্টদের উচিত এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ থেকে উত্তরার মধ্যে চলাচলকারী রাইদা বাসের চালক সাজ্জাত হোসেন বলেন, সকাল ৮টা থেকে সড়কে বাস নিয়ে আটকে আছি। যাত্রীরা সবাই নেমে গেছে। রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধের কারণে কোনো যানবাহন এক চুলও নড়ছে না। গতকালও এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সড়কে রিকশা থাকলে আমাদের আসলেই বাস চালাতে সমস্যা হয়, তারা সড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। মূলসড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত ভালো বলে আমারা মনে করি। কিন্তু তারা আন্দোলনে নেমে পুরো সড়ক বন্ধ করে রেখেছে। ফলে সাধারণ মানুষসহ আমাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রিকশা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন আলী পিবিএকে বলেন, ঢাকা মহানগরী থেকে অবৈধ, অনিবন্ধিত রিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেয়া হোক এতে আমাদের আপত্তি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত চললে দরকার হলে আমরাও সহযোগিতা করব। সকল সড়কে বৈধ রিকশা চলাচল করার জন্য বাইলেন না করা পর্যন্ত বৈধ রিকশাগুলো চলাচল করতে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।

গত ৩ জুলাই রাজধানীর নির্দিষ্ট মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। প্রাথমিকভাবে গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রিকশা চলাচল করবে না। এছাড়া কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে রামপুরা হয়ে খিলগাঁও-সায়েদাবাদ পর্যন্ত রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অনুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন কুড়িল থেকে মালিবাগ এবং গাবতলী থেকে আসাদগেট পর্যন্ত প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল না করার জন্য রিকশা মালিক, চালকদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

 

পিবিএ/জেএন/হক

আরও পড়ুন...