রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করে ফেসবুক গ্রুপ ০০৭

পিবিএ, বরগুনা: বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ফেসবুক ভিত্তিক ০০৭ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ এই হত্যার পরিকল্পনা করে। রিফাত হত্যার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড ও তার সহকারী রিফাত ফরায়েজী ফেসবুকে ভিত্তিক এই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের নাম ০০৭। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের ০০৭ নামের সাথে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান হওয়ার কারণেই নয়নের নামের সাথে বন্ড শব্দটি যুক্ত হয়। মূলত এই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটি ছিল একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, মেয়েদের উত্যক্ত করা সহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত এই গ্রুপ।

আজ শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিক এই গ্রুপের পরিকল্পনা ফাঁস করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে দশটায় বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে।

মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা সংবলিত কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, ঘাতক রিফাত ফরায়েজী আগের দিন রাত আটটার দিকে মেসেঞ্জার গ্রুপে ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেয়। এ সময় নামের প্রথমে মোহাম্মাদ লেখা একজন ও সাগর নামের আরেকজন জানতে চায় তারা কোথায় থাকবে। রিফাত ফরাজী তাদেরকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল ৯টায় থাকতে বলে। রিফাত গ্রুপে দায়ের ছবি দিয়ে বলে, পারলে এইটা নিয়া থাইকো। মোহাম্মাদ জবাবে দা নিয়ে থাকবেন বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ০০৭ নামের একটি গ্রুপ কলেজ রোড, ডিকেপি, দিঘির পাড়, কেজি স্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। গ্রুপের সদস্যরা ০০৭ কে সংকেত ব্যবহার করত। ঘাতক নয়নের মোটরসাইকেলের গায়ে ও বাড়ির দেয়ালে ০০৭ বন্ড লেখা থাকত।

ছিনতাই, ছাত্রদের মুঠোফোন জিম্মি করে টাকা আদায়, ছোটখাটো মারধর থেকে তার অপরাধ প্রবণতা শুরু হলেও ২০১৭ সালে পুলিশি অভিযানে নয়নের কলেজ রোডের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ তাকে আটক করে পুলিশ। এরপরই নয়ন নামটি লাইমলাইটে চলে আসে। ওই মামলায় জামিনে আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে নয়ন। এরপর সে নিয়মিত মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যায় এবং রিফাত ফরাজীকে সঙ্গে নিয়ে ০০৭ নামের একটি গ্রুপ তৈরি করে। ওই গ্রুপে নয়নের সহযোগী হিসেবে বরগুনা পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি সড়কের দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজী কাজ করত।

নয়নের নেতৃত্বে ০০৭ গ্রুপটি ফিল্মি স্টাইলে বরগুনা শহরজুড়ে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। চুরি ছিনতাই লুটপাট, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে নয়নের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরগুনা সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, নয়ন ও তার বাহিনীর অপকর্মে আমরা দিশেহারা ছিলাম। ওর ভয়ে রাতে আমরা রাস্তায় বের হতে পারতাম না। ওর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করলেই চলতো নির্যাতন।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, এই হত্যাকারীরা ফেসবুক ব্যবহার করে মিটিং করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যা আমরা স্ক্রিন শট দেখেই বুঝতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে তারা এই অপকর্ম করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, তদন্তের স্বার্থে গ্রুপের বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত এগিয়ে চলছে।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহনেওয়াজ রিফাতকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের প্রাণপণ বাধা দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা। তারা চেহারা আড়াল করারও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...