রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগে ছয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং কারাগারে নিজে কক্ষে ওসির তল্লাশির অভিযোগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা বেগম এ আদেশ দেন।
মহানগর পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন করার অভিযোগ এনে পিবিআই প্রধানসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তার রিমান্ডে ছিলেন প্রায় এক বছর পাঁচ মাস আগে। এতদিন তিনি কেন আদালতে এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। ওই সময় তাকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছিল, তখনও অভিযোগ করেননি। এখন মিতু হত্যা মামলায় চার্জশিট হয়েছে। মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তিনি এ আবেদন করেছিলেন। তাই আদালত মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তাছাড়া ফেনী কারাগারে তার কক্ষে ওসির তল্লাশির বিষয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে করা আবেদনও আদালত খারিজ করে দিয়েছেন।
গত ৮ আগস্ট পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা। ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশের সময় নির্ধারিত থাকলেও নতুন করে ২৫ সেপ্টেম্বর আদেশের সময় নির্ধারণ করা হয়।
মামলার আবেদনে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি মো. নাজমুল হাসান, মেট্রো এসপি নাঈমা সুলতানা, খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা, সিএমপির ডিবি বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার ইন্সপেক্টর কাজী এনায়েত কবিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫(১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ করা হয়। সময়কাল বলা হয়, ২০২১ সালের ১০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১৭ মে সকাল ১০টা পর্যন্ত।
অন্যদিকে ফেনী জেলা কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের কক্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তার তল্লাশির অভিযোগ এনে তার নিরাপত্তা চেয়ে একই আদালতে গত ১২ সেপ্টেম্বর অন্য আবেদনটি করেছিলেন বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
পরে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তারই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। এরপর গত বছরের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি। বাবুল আক্তারের ওই মামলায় ইতোমধ্যে তাকে প্রধান আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই।