পিবিএ ডেস্ক: করোনায় একটানা ঘরে থেকে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষজন এখন বেরুচ্ছে। কেউ বেড়াতে, কেউবা যাচ্ছে সবুজ চত্বরে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে। বিশেষ করে রাজধানীতে বসবাস করা মানুষজন ভিড় জমাচ্ছে ঢাকার আশেপাশের রিসোর্টগুলোতে। একদিনের জন্য হলেও মুক্ত বাতাসে ছোটাছুটি, পানিতে নেমে দাপাদাপি করে নিজেকে হালকা করতে চাইছে মানুষ। অনেকে আবার চিকিৎসকের পরামর্শে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছে এসব রিসোর্টে। আর তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে রিসোর্টে উপচে পড়া ভিড়। ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার মদনপুরে অবস্থিত সায়রা গার্ডেন রিসোর্ট। সরজমিন দেখা গেল এ যেন অন্য জগৎ। কিছু সময়ের জন্য হলেও মানুষ করোনাকে ভুলে থাকতে চাইছে।
সায়রা গার্ডেন রিসোর্টের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দোলনায় বসে দুলছিল ৬৫ বছর বয়সী আফিয়া খাতুন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তিনি। ছেলে, বউ, নাতি ও নাতনি নিয়ে পরিবারের পনের জন সদস্য এসেছেন এই রিসোর্টে। আফিয়া খাতুন বলেন- গত ছয় মাসে একবারের জন্যও ঘর থেকে বের হইনি। পনের দিন আগে হঠাৎ করে বুক ব্যথা আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ছেলেরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে স্বাস্থ্যের সকল পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কিছুই ধরা পড়েনি। একটানা ঘরে বন্দি থাকা আর টেনশন থেকে এমনটা হয়েছে। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এ জন্য ছেলেরা এখানে বেড়াতে নিয়ে এসেছে। একদিন থাকবো। এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে।
মনে হচ্ছে দুনিয়া আগের মতো হয়ে গেছে। আট বছরের মেয়ে ফাতিমা আর স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে বেড়াতে এসেছেন দেওয়ান শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটানা ঘরে থেকে মেয়েটা অস্থির হয়ে গেছে। ছয় মাস ধরে তার স্কুল নাই। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। দুটো ঈদ গেল তাও কোথাও বের হয়নি। ঘর, বারান্দা আর ছাদ এই তার যাওয়ার জায়গা। ঢাকার ভেতরের বিনোদনকেন্দ্র বা রেস্টুরেন্টগুলো এখনো আমার কাছে অতটা নিরাপদ মনে হয় না। এ জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকা থেকে দূরে গ্রামীণ পরিবেশে বেড়াতে এসেছি। ফাতিমাও অনেক খুশি এখানে এসে। এখানকার সুইমিংপুল তার সবচেয়ে পছন্দ। পানিতে নেমে সারাক্ষণই দাপাদাপি করছে সে। মা-বাবা, ভাই ও বোনদের নিয়ে কাঁচপুর থেকে ঘুরতে এসেছেন নিকি। নিকি মালয়েশিয়াতে মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। মার্চের শুরুতে এক সপ্তাহের জন্য দেশে বেড়াতে আসেন। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে আর মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না তিনি। নিকি বলেন- এক সপ্তাহের জন্য দেশে এসে আর ফিরতে পারলাম না।
কবে ফিরতে পারবো তাও জানি না। এ বছর আমার মেডিকেলের লাস্ট ইয়ার ছিল। মেডিকেল সায়েন্স যেহেতু হাতে কলমের শিক্ষা এ জন্য আমাদের অনলাইনে ক্লাসও সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় বসে বসে বোর হয়ে গেছি। মানসিক অবসাদে ভুগছি। এ জন্য পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে এসেছি। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবুজের মাঝে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। এদিকে সায়রা গার্ডেন রিসোর্টের ম্যানেজার এসকে সায়িদ আহমেদ জানান মার্চে লকডাউনের দিন থেকে আমাদের রিসোর্টটি বন্ধ করে দেই। করোনার কারণে পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এরপর কোরবানি ঈদের ১৫ দিন পর থেকে আবার খোলা হয়। সায়িদ বলেন- করোনাকালীন সময়ে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা মানুষদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। সাধারণত এ সময়টা আমাদের অফপিক থাকে। নভেম্বর থেকে পিকটাইম শুরু হয়। কিন্তু মানুষ এখন আর ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে চাইছে না।
শুক্র-শনিবার ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। করোনার কারণে আমাদের অনেক স্টাফ বাড়ি গিয়ে আর চাকরিতে যোগদান করেননি। আগে আমাদের লোকবল ছিল ৮৫ জন। এখন পঞ্চাশ জন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
পিবিএ/এমএসএম