‘রেড জোন’ ভিত্তিক কঠোর লকডাউন আসছে


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : সংক্রমণের আধিক্য ও ঝুঁিকপূর্ণ বিবেচনায় ঘোষিত ‘রেড জোন’ এলাকায় কঠোর লকডাউন যাচ্ছে সরকার। দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতিতে শতভাগ লকডাউনে এবং প্রয়োগে কঠোর থাকবে সরকার।

ডিজিটাল মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শনাক্ত হওয়া আক্রান্তদের মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে ওইসব এলাকার ম্যাপ তৈরি করছেন। রাজধানীতে এ কাজ প্রায় শেষ। দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

আজ কালের মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় চিহ্নিত ওইসব এই লকডাউন শুরু হওয়ার কথা। আর এ সপ্তাহের মধ্যে দেশের সংক্রমিত ঝুকিপূর্ণ এলাকা গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য স্থানে লকডাউন কার্যকর হবে এলাকাভিত্তিক।

বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে রাজধানীর যেসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, সেসব এলাকা আজ-কালকের মধ্যেই লকডাউন করা হবে।
এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে সেসব এলাকা একই পদ্ধতিতে লকডাউন করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সরকার রাজধানী ঢাকাকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ঢাকার যে যে এলাকায় বেশি সংক্রমণ ঘটেছে এবং বেশি রোগী আক্রান্ত সেসব এলাকা চিহ্নিত করার কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। এখন বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে ওই এলাকাগুলো লকডাউন করে দেওয়া হবে।

এবারের লকডাউনে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। লকডাউন করা ‘রেড জোন’ এর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কাউকেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঢাকাসহ সারা দেশের বড় বড় শহর থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত প্রায় সব এলাকায় প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া আক্রান্তদের মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে ওইসব এলাকার ম্যাপ তৈরি করছেন। রাজধানীতে এ কাজ প্রায় শেষ। দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

এই প্রকৃয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে রোগী চিহ্নিত করার পর যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা যাচ্ছে সে এলাকাকে ‘রেড জোন’ বলে ঘোষণা দিয়ে ওই এলাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হবে। একই পদ্ধতিতে ইয়েলো ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করা হবে। এরপর প্রয়োজনে ইয়েলো জোনকেও লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়েলো জোনে কেউ খুব জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আশা করছি, আগামীকাল(রবিবার) থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার ঘোষণা আসবে। যেসব এলাকায় রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে সেসব এলাকাকে লকডাউন করা হবে। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একই প্রক্রিয়ায় সারা দেশে এই লকডাউন কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, সারা দেশের চিত্রটা তৈরি করতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তাই বৃহস্পতিবার নাগাদ সারা দেশের ঘোষণা আসবে।

এদিকে গত কয়েক দিনের পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে দুশ্চিন্তায় ফেলে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। সভায় উপস্থিত প্রায় প্রত্যেকেই নতুন করে লকডাউনের পক্ষে মত দেন। এই সভার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সারা দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেগুলোতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে।

পিবিএ/এমএ

আরও পড়ুন...