পিবিএ ডেস্কঃ তুলসী পাতার ব্যবহার আপনার সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে কতখানি কার্যকর তা কি আপনার জানা আছে? আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তাই আয়ুর্বেদিক ওষুধের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান| আমাদের জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি নানা রকম রোগের জন্য তুলসী পাতা অত্যন্ত উপকারী| এছাড়া আমাদের ত্বক ও চুলের নানান রকম সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতার অবদান অনস্বীকার্য|
তুলসী পাতার ব্যবহারঃ সিজিন চেঞ্জ মানেই ঘরে ঘরে জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি রোগ| এই সময় ছোটো বড় সকলেরই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত| তুলসী পাতার ব্যবহার এই সময় আপনার শরীর সুস্থ্য রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে| জেনে নিন এই সময় কিভাবে তুলসী পাতা ব্যবহার করবেন|
তুলসী চাঃ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগ দুটি আজকাল মারাত্মক আকার নিয়েছে| নিয়মিত তুলসী চা আপনাকে এই ধরনের জ্বরের কবলে পরা থেকে রক্ষা করে| কিভাবে বানাবেন এই তুলসী চা? খুব সহজ| ১০ থেকে ১৫ টি তুলসী পাতা চা বানানোর সময় ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুটিয়ে তারপর চা পাতা সমেত আরো ২ মিনিট মত ফুটিয়ে নিন| এবার ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন| এই তুলসী চা দিনে ২ বার করে খান|
তুলসী মিল্কঃ খুব বেশি মাত্রায় জ্বর হলে তুলসী মিল্ক আমাদের টেম্পারেচার কমিয়ে দিতে সাহায্য করে এবং আমাদের শারীরিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে| ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা ও ১-২ এলাচ ১/২ লিটার পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন| পানির পরিমান কমে আসলে গ্যাস বন্ধ করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন| এবার এই পানি দুধ ও চিনি মিশিয়ে পান করুন| এতে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে|
এগুলি ছাড়া নানা ধরনের তুলসী পাতার জুস তৈরী করা যেতে পারে যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতার সময় উপকারে লাগে|
তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
গলা ব্যথার জন্যঃ গলা ব্যথা বা গলা ভেঙ্গে গেলে ৫ থেকে ৭ টি তুলসী পাতা জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়| এছাড়া এই ফোটানো পানি দিয়ে গারগেল করলেও আপনি উপকার পাবেন|
অ্যাজমা, ব্রংকাইটিসের জন্যঃ অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা অত্যন্ত কার্যকরী| ১০-১২ টি তুলসীপাতা, ও আদা পানিতে ফুটিয়ে নিন ভালো করে এবার ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ২ চামচ মধু মিশিয়ে নিন| এই জুস নিয়মিত খেলে অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের রুগী বিশেষ আরাম পাবেন|
রক্ত পরিশুদ্ধ করতেঃ আমাদের শরীরে রক্তকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খান| এতে যেমন রক্তের অশুদ্ধি দূর হয় তেমনি আমাদের দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত থাকে| মুখের আলসার বা যেকোনো রকম মাউথ ইনফেকশন হলে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে তা সেরে যায়|
কিডনির স্টোনের ক্ষেত্রেঃ কিডনিতে স্টোন হলে তা অপসারণের জন্যও তুলসী পাতা উপকারী| এর জন্য ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন| এর সাথে ২ চামচ মধু মিশিয়ে খান ৬ মাস| এর ফলে কিডনিতে জমা স্টোন গলে ইউরিনের সাথে দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়| তবে এর সাথে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরামর্শ জরুরি|
ইনফ্লুয়েঞ্জা সারিয়ে তুলতেঃ খুব তাড়াতাড়ি ইনফ্লুয়েঞ্জা সারিয়ে তুলতে হলে ১/২ লিটার জলে ১০-১২ টি তুলসী পাতা, ২-৩ টি লবঙ্গ ও সামান্য লবন ফুটিয়ে নিন| জলের পরিমান কমে আসলে গ্যাস বন্ধ করে পনি ছেঁকে নিন| যতটা সম্ভব গরম অবস্থায় পান করুন|
এগুলি ছাড়াও তুলসী পাতা আরো নানা ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী যেমনঃ-
১. অনেক সময় রান্না করতে গিয়ে আমাদের হাতে পোড়া লাগে বা ছ্যাঁকা লাগে। এক্ষেত্রে ১৫-২০ টি তুলসী পাতা বেঁটে তার সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে ওই জায়গা গুলিতে লাগিয়ে নিলে জ্বলার ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়|
২. অতিরিক্ত রোদে বাইরে কাজ করলে অনেক সময় আমাদের মাথা ব্যাথা হয়| এই ধরনের ব্যাথায় আরাম পেতে বেশ কিছু পরিমানে তুলসী পাতা বাটা ও চন্দন বাটা একসাথে মিশিয়ে কপালে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা সেরে যাবে|
৩. পোকামাকড়ের কামড়ের জ্বালা বা চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৫ থেকে ২০ টি তুলসী পাতা বেটে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ওই অঞ্চল গুলিতে লাগিয়ে নিলে আরাম পাওয়া যায়|
৪. ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে বেশ কিছু পরিমান তুলসীপাতা রোদে ভালো করে শুকিয়ে বেটে পাউডার মত বানিয়ে নিন| নিয়মিত এই পাউডার দিয়ে দাঁত মাজুন| এর ফলে দাঁত মজবুত ও ঝকঝকে হয়|
৫. খুশকি, ড্রাই, ইচি স্কাল্পের সমস্যা থাকলে ২০-২৫ টি তুলসীপাতা, ২-৩ টি জবা ফুলের পাপড়ি, ১৫-২০ টি নিমপাতা একসাথে বেটে মাথায় লাগান। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে|
তুলসী পাতার গুন বা ব্যবহার গুনে বা বলে শেষ করার মত নয়| এর নিয়মিত ব্যবহার আমাদের নানারকম রোগের হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করে| এই সমস্ত রকম রোগ বা সমস্যার জন্য তুলসী পাতা কার্যকরী তবে এর সাথে চিকিত্সকের মতামতও জরুরি| তাই আপনার শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য তুলসীপাতার ব্যবহার আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী শুরু করুন ও ভালো থাকুন।
পিবিএ/এমআর