পিবিএ,ঢাকা: মাশরুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখা উচিত। সালাদ হিসেবে, ভেজে, সুপ করে বা রান্না করে খাওয়া যায় মাশরুম । তবে শুধু চাষ করে উৎপন্ন মাশরুম খেতে হবে।
বুনো জায়গায় জন্মানো মাশরুম অবশ্যই গ্রহণ করা নিষেধ। মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ও ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার। এটি রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং চুল পড়া ও চুল পাকা প্রতিরোধ করে।
আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খেয়ে থাকি সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি বলে এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
মাশরুমের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ :
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: মাশরুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন, মিনারেলের ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: মাশরুমে সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এবং এতে উচ্চমাত্রার আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের কাজে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: ওজন কমিয়ে পেশীবহুল শরীর তৈরি করতে সাহায্য করে মাশরুম। মাশরুমের ফাইবার বা আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। অধিক ফ্যাট সমৃদ্ধ লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমানো সহজ হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: মাশরুম গ্রহণ করলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে ভর্তি মাশরুম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। মাশরুমে এনজাইম ও প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকে যা চিনিকে ভাঙ্গতে পারে।
অ্যানিমিয়া দূর করে: মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। অ্যানিমিয়ার রোগীদের রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব কম হয়ে যায়। এর ফলে মানসিক অবসাদ, মাথার যন্ত্রণা এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। মাশরুম অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করে।
কোলেস্টেরল কমায় : মাশরুমে যে ফাইবার থাকে, তা আমাদের শীররে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া মাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
হাড়ের শক্তি বাড়ায়: প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকার জন্য মাশরুম আমাদের হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গাঁটের ব্যথা কমাতে এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে মাশরুমের জুড়ি মেলা ভার।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় মাশরুম। স্তন ক্যানসার এবং প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে মাশরুমের কোনও তুলনাই নেই। মাশরুমের ফাইটোকেমিক্যাল টিউমারের বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করে।
ত্বক সুস্থ রাখে: মাশরুমে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। এই ছত্রাকে ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখে।
ভিটামিন ডি থাকে: সব্জিতে ভিটামিন ডি পাওয়া খুবই দুষ্কর। কিন্তু মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
হজমে সাহায্য করে: এতে থাকা ফাইবার ও এনজাইম হজমে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে।
তাছাড়া মাশরুমের ভিটামিন বি স্নায়ুর জন্য উপকারী এবং বয়সজনিত রোগ যেমন- আলঝেইমার্স রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী। হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধ করতেও মাশরুম খুবই উপকারী। মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও এন্টি এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক।
খাওয়ার নিয়ম: কাঁচা এবং শুকনা মাশরুম ১৫ বা ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ফেলে দিয়ে ফ্রাই বা সবজির মতো করে, তরকারি বা মাছ গোশতের মধ্যে দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।
পিবিএ/ইএইচকে