পিবিএ,ডেস্ক: রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হিংসাত্মক বক্তব্য প্রচার ও সহিংসতার উসকানিদাতা হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথুকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির একটি আদালত। বুধবার মিয়ানমার পুলিশ বলছে, ভিক্ষু উইরাথুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এই পরোয়ানা জারি হয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন বেসামরিক সরকারেরও সমালোচক এই বৌদ্ধ ভিক্ষু। তবে দেশটির শক্তিশালী সামরিক সরকারের সমর্থক তিনি।
মিয়ানমার পুলিশের মুখপাত্র মিও থু সোয়ে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমের একটি জেলার আদালত মঙ্গলবার আশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’ তবে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কোনো কারণ জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
সামরিক শাসনের বাইরে এসে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক যাত্রা ২০১১ সালে শুরু হয়। ওই সময় থেকে দেশটির রাজনীতিতে উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটতে থাকে দেশটির উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আলোচিত এই ভিক্ষুর।পুলিশের ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘উইরাথুর ঘাঁটি মান্দালয় শহরের পুলিশ এখনো এই গ্রেফতারি পরোয়ানার নোটিশ পায়নি। ২০০১ সালে তিনি মুসলিমবিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ছিল ৯৬৯ গ্রুপ। এ সংগঠনটিকে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও উগ্রপন্থার বিষয়টি উইরাথুর সমর্থকরা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। ২০০৩ সালে তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দীর সাথে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সরকার নিয়ম শিথিল করার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি ইউটিউব এবং ফেসবুকে নানা ধরনের বক্তব্য ছড়াতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার ৩৭ হাজারের বেশি ফলোয়ার ছিল ।২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে মুসলমান এবং বৌদ্ধদের মধ্যে যখন তীব্র সংঘাত শুরু হয়। সে সময় আশ্বিন উইরাথু তার জ্বালাময়ী বক্তব্য নিয়ে জনসমক্ষে আসেন। তার একটি পরিচিত উক্তি ছিল, ‘তুমি যাই করো, সেটা একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে করবে।’
তাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ‘বার্মার বিন লাদেন’ কি না? জবাবে উইরাথু বলেছিলেন, এ বিষয়টি তিনি অস্বীকার করবেন না। বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলেছেন, তিনি শান্তির জন্য কাজ করছেন। ২০১৩ সালের ১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিন আশ্বিন উইরাথুকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল। সেটির শিরোনাম ছিল, ‘একজন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ।’তার বক্তব্য হিংসা ছড়িয়েছিল এবং সেগুলোর মূল টার্গেট ছিল রোহিঙ্গা মুসলমানরা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের তৃতীয় কোন দেশে স্থানান্তরিত করার দাবি নিয়ে তিনি সমাবেশও করেছেন।
মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার বেশি- এমন বক্তব্য প্রচার করেছেন আশ্বিন উইরাথু। তিনি অভিযোগ করেন, বৌদ্ধ নারীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, আশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে টার্গেট করা হবে।
পিবিএ/এইচটি