রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এইডস রোগীর সংখ্যা

পিবিএ,কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এইচআইভি বা এইডস এর প্রবণতার কথা প্রথম থেকে ধারণা করা হচ্ছিল এবং তার উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছিল। এই এইডস এর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এখন ৩১৯জনে। এদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ২৭৭জন চিকিৎসাধীন থাকলেও বাকিদের মধ্যে কোন সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে এর সংখ্যা ২ থেকে আড়ায় হাজারের বেশি বলে ধারণা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৯লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তার মধ্যে গত ফেব্রুয়ারীতে ৪জন পুরুষ ও ৫ জন নারী এইডস রোগী চিহ্নিত করা গেছে। একই সময়ে ২জন নারী ও ১জন পুরুষ মারা গেছে

কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এইচআইভি বা এইডস এর প্রবণতার কথা প্রথম থেকে ধারণা করা হচ্ছিল এবং তার উপস্থিতি  প্রমাণিত হয়েছিল।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তা এসএম আখতারুজ্জামান পিবিএকে বলেন, কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফ হাসপাতালে এইচআইভি-এইডস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত কাউন্সিলিং ও টেস্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাদের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায় তাদের কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত ৪৪৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৯ জন রোহিঙ্গা এবং ১২৯ বাংলাদেশি রয়েছে।

তবে এ রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এইডসে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজারে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী ৮৪ রোহিঙ্গাকে উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-ল্যাপ্রোসি এবং এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের এইচআইভি-এইডসে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। সে জন্য শনাক্ত ও চিকিৎসা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে কাজ করছি। রোহিঙ্গা এইডস রোগীদের বেশিরভাগ মিয়ানমারে শনাক্ত হয়েছিল।

কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে তারা চিকিৎসা পেত না। আমাদের দেশে আসার পর আমরা এইচআইভি আক্রান্তদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় এনেছি। যেন অন্যদের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত না হয়। আমরা প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছি।

যার আওতায় গর্ভবতী নারীদের এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কেউ শারীরিক নির্যাতনের শিকার এলে তখনও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কেউ কোনো কারণে চলে এলে তাদের পরীক্ষা করছি। বৈশ্বিক নিয়ম অনুযায়ী এইচআইভি শনাক্তের আগে কাউন্সিলিং করতে হয়। আমরা সেই আলোকে কাজ করছি।

জানা গেছে, এশিয়ার মধ্যে যে কটি দেশ এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তার মধ্যে মিয়ানমার অন্যতম। জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের তথ্য মতে, দেশটিতে বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ০.৮ ভাগ এইডসে আক্রান্ত।

এ ছাড়া শিরায় ইনজেকশন গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ, নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে ৬.৩ শতাংশ এবং সমকামীদের মধ্যে ৬.৬ শতাংশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২ থেকে আড়াই হাজার এইডস রোগী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা পিবিএকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা যদি আমাদের দেশের স্থানীয় লোকদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়, তা হলে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই রোহিঙ্গারা যেন কক্সবাজারে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে।

যাদের এইচআইভি শনাক্ত হচ্ছে তাদের একা বা স্বজনের সঙ্গে কক্সবাজার হাসপাতালে আসতে দেওয়া হয় না। এই আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার হাসপাতালে নিয়ে যান আইএমও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে স্থানীয় জনগন নহ এনজিও কর্মীদের সমাগমের কারণে দেশিয় জনগনের মধ্যে এইডস এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পিবিএ/টিএ/আরআই

আরও পড়ুন...