
রাজধানীর হাতিরপুলে র্যাব সদস্য পরিচয়ে প্রবাসীকে মারধর ও তার কাছে থাকা ২০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মালামাল লুটের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন:- মো. আল আমিন হাওলাদার (৪০), মো. ওমর ফারুক (৩৪), মো. ফারুক বেপারী (৩৯), মো. শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১), মো. মানিক (২৭), জহিরুল ইসলাম জহির (৪৮), আল-আমিন আহম্মেদ (৪০) ও মো. বারেক (৪৪)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, র্যাবের কোটি, হ্যান্ডকাফ, হকিস্টিক ও বেতের লাঠি, একটি মোবাইল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা বিদেশ থেকে আসা লোকদের টার্গেট করে সুবিধাজনক স্থানে দাঁড় করিয়ে র্যাব-ডিবি পরিচয় দিয়ে স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এইভাবে তারা ১২-১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন উদ্দিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে দুবাই থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে আসেন মো. ফারুক মিয়া (৫৫)। সেখান থেকে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার নিয়ে তিনি তার হাতিরপুলের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। রাত ৩টার দিকে হাতিরপুলের ১৬৯ নম্বর বাসার সামনে উপস্থিত হলে একটি কালো রংয়ের নোহা মাইক্রোবাস তার গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় ওই গাড়ি থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ৫/৬ জন লোক নেমে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে ফারুককে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে টেনেহিচড়ে নামিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামালসহ তাকে ওই গাড়িতে নিয়ে চলে যায়। এরপর বাদীকে ঢাকা মহানগের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাকে হাতিরঝিল এলাকায় নামিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় ফারুক মিয়া বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নামে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় টানা অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সাতজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহসীন আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তকালে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে অনুসরণ করে ও সুবিধাজনক স্থানে পথরোধ করে র্যাব, ডিবি পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে। এই পন্থায় ডাকাত চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দস্যুতা ও ডাকাতিসহ মোট চারটি মামলা, ফারুক বেপারীর বিরুদ্ধে নারী-শিশু ও ডাকাতিসহ মোট দুটি মামলা, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও ডাকাতিসহ মোট সাতটি মামলা, মানিকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য, বিস্ফোরক, দস্যুতা ও ডাকাতিসহ মোট নয়টি মামলা, জহিরুল ইসলাম জহিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও ডাকাতিসহ মোট ১২টি মামলা, আল-আমিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য, চুরি ও ডাকাতিসহ মোট পাঁচটি মামলা, বারেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, নারী-শিশু, চুরি ও ডাকাতিসহ মোট ১৪টি মামলা দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে।