লক্ষ্মীপুরে একজন মুক্তিযোদ্ধার আকুতি

পিবিএ, লক্ষ্মীপুর: আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মাতৃভূমিকে রক্ষায় সেদিন রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অকুতোভয়ে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। জীবনে বড় স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হলে সুখে থাকবো, শান্তিতে ঘুমাবো। জীবনে আর কিছু পাই আর না পাই দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
ইতিহাস থেকে এমনে কথা বলেন, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের আটিয়া তলী গ্রামের জহির উদ্দিন পলোয়ান বাড়ির মৃত সামছুল হক পলোয়ানের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক পলোয়ান, তিনি তার জীবনে ঘটে যাওয়ার কষ্ঠের দিন গুলোর কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালে নোয়াখালী ২নং সেক্টরে স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে রক্ষা করার স্বার্থে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৮ ই এপ্রিল তৎকালীন আনসার বাহিনীর কমান্ডার থেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি।

মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক পলোয়ান |

বাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে চলে যাওয়ায় ! আমার পিতা বৃদ্ধা মানুষ ছিলেন। তিনি অভাব অনটনের তাড়নায় দিশেহারা হয়ে যায়। পরে নিজের বসত ভিটে বাড়ি বিক্রয় করে দেয়। আমার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে ও আমাকে না পেয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ দিন যাবত রোগে ভুগেন। ১৯৭১ সালে ৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও শোক প্রকাশ না করে হানাদার বাহিনীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি।

যুদ্ধে শেষে আমি নিজ গ্রামে পিরে এসে দেখতে পাই যে, নিজের বসবাস করার ভিটে বাড়ি নেই। তখন দিশেহারা হয়ে গত ২৫ মে ১৯৭২ সালে নিজ এলাকায় ছেড়ে ঢাকা চলে যাই। ঢাকায় টঙ্গিতে অলম্পিয়া মিলে শ্রমিক পদে একটি চাকুরি নিয়ে কর্মজীবন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম।
মাস শেষে সামান্য বেতন পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর ভাড়া দেয়ার পর নিজে কাছে জমানোর মতো কোনো টাকা পয়সা ছিল না। এভাবে দুঃখ কষ্টে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসতেছি। স্থায়ীভাবে আজও কোনো ভিটে বাড়ি নির্মাণ করতে পারি নাই।

মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শে আদর্শিত হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলেও আজও বাসা, বাড়িতে ভায়া করে আসতেছি। ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনো রকম ভাবে দুঃখ কষ্টে অনাহারে মানবতার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করি ও বৃদ্ধ বয়সে কয়েককটি জটিল ও কঠিন রোগ নিয়ে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছি। এবং আমার ভিটে বাড়ি না থাকায় বিএ পড়াশুনা করা আমার মেয়েকে বিবাহ দিতে পারি নাই।
চাকুরির বয়সও শেষ। বড় কষ্টে আছি। অভাবের তাড়নায় এখন মানুষের কাছে হাতও পাততে পারিনা, চেয়েও খেতে পারিনা।

এ বীরমুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, অসহায় নিরীহ ভিটে বাড়িহীন তেমন কোন জমি-জমা নেই যে চাষাবাদ করে খাবো। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াতো দুরের কথা দু’বেলা দু’মুঠো ভাত-কাপড়ও দিতে পারছি না। তাই জীবনের শেষ বেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ফরিয়াদ তিনি যেন ভিটে বাড়িহীন মুক্তিযোদ্ধো জন্য পূর্ণবাসন করে পরিবার পরিজনকে নিয়ে শেষ বয়সে বসবাস করার জন্য একটু মাথা গোজার জায়গা করে, কোনো রকম মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষা করেন। শুধু এই টুকু দয়া চাই তার কাছে আর কিছুই চাই না। এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রীর করুনা চাইলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক পলোয়ান।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল জানায়, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক পলোয়ান কে পূর্ণবাসন দেওয়ার জন্য উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা সাথে যোগাযোগ করে পূর্ণবাসনের করার চেষ্টা করবেন বলে আশ^স্ত করেন।

পিবিএ/এএইচ/হক

আরও পড়ুন...