পিবিএ, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নওগাঁর এক গৃহবধূ চলে এসেছেন কমলনগরে। কিন্তু আশ্বাস দিয়েও বিয়ে না করায় ওই গৃহবধূ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আমজাদ হোসেন রাব্বি (২৫) পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাতে স্থানীয়রা অসুস্থ গৃহবধূকে উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিযুক্তকে আটক করতে অভিযান শুরু করে। অভিযুক্ত রাব্বি উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও তোরাবগঞ্জ গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের মাঝি বাড়ীর আবুল কাসেমের ছেলে।
ওই গৃহবধূ নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দুই সন্তানের জননী। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে গৃহবধূর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাব্বির পরিচয়। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাব্বি নওগাঁয় বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করেছে। গৃহবধূও লক্ষ্মীপুর আসেন একাধিকবার। বিয়ের আশ্বাসে তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে এক সঙ্গে রাত্রিযাপনও করেন রাব্বি।
গত বৃহস্পতিবার বিয়ে করবে বলে তাকে উপজেলার তোরাবগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। এক রাত সঙ্গে রেখে বিয়ে না করে নওগাঁয় ফিরে যেতে বলে। এ সময় বিয়ের চাপ দিলে রাব্বি পালিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ওই গৃহবধূ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরে তোরাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ বলেন, ‘৮ বছর আগে মা-বাবা অল্প বয়সে বাল্যবিয়ে দেয় তাকে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়ায় স্বামীর সংসারে সুখি হতে পারেননি তিনি। দুই বছর আগে রাব্বির সঙ্গে ফেসবুকে যোগযোগ শুরু হয়। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের আশ্বাসে রাব্বি শারিরিক সম্পর্কও গড়ে তোলে। তার প্রলোভনে গত ৮ মাস আগে স্বামী ও দুই সন্তান রেখে বাবার বাড়িতে চলে যাই। কিছুদিন বোনের বাড়িতেও ছিলাম। রাব্বি নওগাঁ গিয়ে আমার সঙ্গে এক-দুইদিন থাকার পর বিয়ে না করে বিভিন্ন অজুহাতে চলে আসে। দীর্ঘদিন থেকে বিয়ে করবে-করবে বলেও করছিলনা। বিয়ের আশ্বাসে তার এলাকায় গেলে (তোরাবগঞ্জ গ্রামে) এক রাত রেখে আমাকে চলে যেতে হুমকি দেয়। বেশকিছু তথ্য প্রমান, দুই জনের একান্ত কিছু ছবি ও ভিডিও থাকায় সে আমার মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।’
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল করিম রাজিব বলেন, স্থানীয়রা নওগাঁ থেকে আসা এক গৃহবূকে অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন এবং অনেকটাই ক্লান্ত। কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। ওই গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাতেই পুলিশ রাব্বির বাড়িতে যায়। তবে এ সময় কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একই কথা কমলনগর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেনও বলেন। চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধুকে দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসপাতালে আসেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাব্বির মতামত জানতে তাদের বাড়ীতে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়।
পিবিএ/এএ/জিজি