লক্ষ্মীপুরে ভেজা সুপারিতে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল

সুপারির রাজধানী হিসাবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর। এখানকার উৎপাদিত সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন।
ভেজা সুপারিতে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল

পিবিএ,লক্ষ্মীপুর: সুপারির রাজধানী হিসাবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর। এখানকার উৎপাদিত সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু অধিক লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুপারি খোলা জলাশয়ে ভিজিয়ে ও ক্ষতিকারক বিষাক্ত (হাইড্রোজ) ক্যামিকেল মিশ্রিত করে বাজারজাত করছেন।

যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। সঠিক তদারকির অভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় দেদারছে পরিবেশ দূষন করছে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা।
আর এসব বিষয় যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছে সংশ্লিষ্টরা। এর থেকে প্রতিকার পেতে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণের দাবী স্থানীয়দের।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের সাহাপুর গ্রামের শিশু পরিবার সংলগ্ন এলাকায় বিশাল পরিসরে ভেজা পঁচা সুপারিতে বিষাক্ত (হাইড্রোজ ক্যামিকেল) রং মিশিয়ে গুদমাজাত করছেন ফয়েজ আহমেদ নামে এক সুপারি ব্যবসায়ী। তিনি লক্ষ্মীপুরের সবচেয়ে বড় সুপারির ব্যবসায়ী।

প্রতিবছর বিষাক্ত ক্যামিকেল মেশানো প্রায় ৭/৮ কোটি টাকার সুপারির ব্যবসা করে থাকেন। এবার প্রায় ৭ কোটি টাকার সুপারিতে বিষাক্ত রং মিশিয়ে জেলার বাহিরে সরবরাহ করার জন্য গুদাম জাত করছেন তিনি। এতে একদিকে যেমন আশপাশের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অপরদিকে এ সুপারি খেয়ে মানুষের ক্যান্সারের আশঙ্কা রয়েছে। ফয়েজ স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। আলাপকালে সুপারির ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদ মোবাইল ফোনে জানান, সারাদেশে এ ক্যামিকেল ব্যবহার করলে তাদের কোন সমস্যা হয় না। শুধু আমাদের এখানে সমস্যা। হাইড্রোজ ক্যামিকেল না মিশালে এ সুপারি বিক্রি হবে না।

কার কি হলো এটা আমার দেখার বিষয় না। সুপারি বিক্রি করলে অধিক লাভ হবে এটাই বেশি। একই ভাবে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ড ভূঁইয়া বাড়ি লুজার ঘর সংলগ্ন এলাকায় খোলা স্থানে শ্রমিক দিয়ে পঁচা সুপারিতে বিষাক্ত (হাইড্রোজ) ক্যামিকেল মিশাচ্ছেন দুলাল ও ফিরোজ নামে আরো দু’জন ব্যবসায়ী।

এসময় কর্মরত শ্রমিকদের হাত-পাসহ পুরো শরীরে ক্যামিকেল রং লেগে আছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকার। এসব বিষাক্ত সুপারি খেলে মানুষের পাকস্থলীতে মরণব্যাধি ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এসময় বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশানোর কারণ জানতে চাইলে সুপারি ব্যবসায়ী দুলাল জানান, পঁচা সুপারিতে রং না মেশালে বাহিরের জেলার ব্যবসায়ীরা নিতে চায় না। তাই সুপারির উজ্জল রং ফিরে আনতে এ ক্যামিক্যাল ব্যবহার করেন তারা।

তবে বিষয়টি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল কে স্থানীয় ভাবে জানানো হলেও তার পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
শুধু দুলাল, ফিরোজ বা ফয়েজ আহমেদই নয়, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী বশিকপুর এলাকার আশু বাবু, রসুরগঞ্জ এলাকার বারেক, করিম খাঁ, চররুহিতার লতিফ ব্যাপরী, মানিক ব্যাপরী, মান্দারি এলাকার বাবুল একই ভাবে ক্যামিকেল মিশাচ্ছেন।

জেলার সদরের কাঞ্চনী বাজার, রসুলগঞ্জ, দালাল বাজার, হামছাদি, ও নন্দনপুর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি খাল ও পুকুর পাড়ে প্রকাশ্যেই এসব ভেজা সুপারিতে বিষাক্ত হাইড্রোজ ক্যামিক্যাল মিশাচ্ছেন অসাধু সুপারি ব্যবসায়ীরা।

তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোন নজরই নেই । এতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুকিতে ভুগছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, জেলার সুপারি খুবই সুস্বাধু, তাই ক্রেতা চাহিদাও বেশি। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য এ সুপারি বিষাক্ত করা হচ্ছে। এতে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

অপরদিকে এসব সুপারি বিষাক্ত ক্যামিকেল খাল-পুকুরের পানিতে মিশে পানিও দূষিত করা হচ্ছে। প্রকাশ্যেই ব্যবসায়ীরা সুপারিতে ক্যামিকেল মিশাচ্ছেন। প্রশাসন দেখেও দেখেন না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

ক্যামিকেল যুক্ত সুপারিতে মানুষের স্বাস্থ্যে কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আনোয়ার হোসেন জানান, হাইড্রোজ ক্যামিকেল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এটি খেলে পরিপাকতন্ত্র জনিত ক্যান্সার হতে পারে। মুখের গ্রোব্বর থেকে পাকস্থলি পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁ ও হজম জনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।এছাড়াও কিডনির ও লিভার পানশনে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই এসব বিষাক্ত ক্যামিকেল ব্যবহার থেকে সুপারি ব্যবসায়ীদের বিরত রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির জানান, এ জেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়।

হাইড্রোজ ক্যামিকেলটি সুপারি জন্য খুবই ক্ষতিকর। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা প্রতিনিয়তই সুপারি ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছেন ক্যামিকলে না মেশানোর জন্য। তাছারা ক্যাম্পেন করেও ক্যামিকেল থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে।

তারপরও যারা এর সাথে জড়িত প্রশাসনের সহযোগীতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল, খবরটি শুনেছি, বিষয়টি দেখার জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখনই কিছু করা হচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশিয়ে সুপারি বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

পিবিএ/এফএস/আরআই

আরও পড়ুন...