লালমনিরহাটের ধরলা চরের মাদক ডনরা এখন তরমুজ চাষী

পিবিএ,লালমনিরহাট: সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে গেছে ধরলা চরের একটি গ্রামের চিত্র। ওই গ্রামের মাদকের ডনরা এখন কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাটের ধরলা নদীর বালু চরে রসালো তরমুজ চাষ করে আশপাশের চাষীদের অবাক করে দিয়েছে চর মাদকের ডনরা। চাষ পদ্ধতি জানলে ধু-ধু বালুতেও সোনা ফলানো যায়- একথাটি প্রমান করেছে তারাও শুধু মাদক ব্যবসায়ী নন, তারা এখন সফল চাষী। যার পুরো কৃতিত্ব পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক এর। যার সফল প্রচেষ্টায় শত শত মাদক ব্যবসায়ী আলোর পথে ফিরে এসেছে।

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, জেলার আদিতমারী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা একটি ইউনিয়নের নাম দুর্গাপুর। এ ইউনিয়নের কুঠিবাড়ি চর গ্রামের মানুষ ধরলা নদীর ভাঙ্গনে ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে দিশাহারা। জীবন জীবিকা নির্ভর একমাত্র ফসলি জমি ও মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু ধু-ধু বালু চরে পরিনত হয়েছে।

তরমুজ
মাদক ডনরা এখন তরমুজ চাষী

ফলে সংসার চালাতে কেউ কেউ মাদকের মত চোরাচালানের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। একটি চরাঞ্চলের গ্রামে বছরের পর বছর মাদক ব্যবসা অব্যাহত থাকার কারণে গ্রামটি মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত পায়। এক সময় সেখানে প্রতিদিন শত শত বোতল মাদক আদান প্রদান হতো। কেউ এটি বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। অথচ সেই গ্রামের মাদকের পুরো চিত্র বদলে দিয়েছেন পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।

লালমনিরহাটের মাটি মাদকের ঘাটি গুড়ি দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে এস এম রশিদুল হক যোগদানের পর পর শুরু হয় মাদক বিরোধী অভিযান। এই অভিযানে কেউ ছাড় পায়নি। প্রায় প্রতিদিন মাদকসহ ধরা পড়ে ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে পুলিশ সুপার সীমান্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাদক ব্যবসার পরিনিতি সর্ম্পকে ধারণা দেন। মাদক ব্যবসা বন্ধের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। ফলে ২/৩ বছর ধরে প্রশাসনের সাঁড়াাশী অভিযানে অনেকেই এপথ থেকে ফিরে এসেছেন।

অন্ধকার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে চরের মাদকের ডনরা বিভিন্ন চাষাবাদ ঝুঁকে পড়েন। এবার চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ জন মাদক ব্যবসায়ী তরমুজ চাষাবাদ করছে। তাই মাদকে জনপদ চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে চাষীর সংখ্যা। ওই গ্রামের তরমুজ চাষী তৈয়ব আলী জানান, কার্তিক মাসে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সারিবদ্ধ ভাবে গর্ত করে জৈব সার দিয়ে তরমুজের বীজ রোপন করতে হয়। এরপর নিয়মিত সেচ দিতে হয়। চারা বড় হলে বালুতে বিচরন করে।

প্রয়োজন শুধু দৈনিক ২/৩ বার সেচ দিয়ে তপ্ত বালুতে গাছের শিকড় ভিজিয়ে রাখতে হয়। পোকার আক্রমন হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ ভাবে চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার টাকা খরচে ৩ হাজার চারা লাগিয়েছেন। বর্তমান বাজার দর অনুয়ায়ী খরচ মিটিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করা আশা করছেন চাষী।

নাম প্রকাশ অনইচ্ছুক তরমুজ চাষী বলেন, এবার চলতি মৌসুমে ওই এলাকায় প্রায় ৩০ জন চাষী তরমুজ চাষাবাদ করছে। ৮/১০ জন তরমুজ চাষী বাদে বাকী চাষীরা চোরাচালান সাথে জড়িত ছিলেন। তারাও এবার তরমুজ চাষাবাদ সহ বিভিন্ন কৃষি কাজে নিজেকে আত্ননিয়োগ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সব চাষীদের আয়ের স্বপ্ন পুরন হবে এমনটাই তারা আশা করছেন। অন্ধকার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে চাষাবাদ ঝুঁকে পড়েন।

একই এলাকার অপর চাষী বলেন, আমরা এক সময় এই এলাকার মাদকে ডন ছিলাম। এমনকি মাদক ব্যবসার ডন হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। বর্তমান পুলিশ সুপার এস. এম রশিদুল হক যোগদানের পর শপথ বাক্যপাঠ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, মাদক ব্যবসা করায় সমাজের লোকজন খুব ঘৃণা করত আমাকে। ছেলে/মেয়েরা বাহিরে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে না। ছেলে/মেয়েরা বিয়ে সাধী ঠিক হলেও বার বার ভেঙ্গে যায়।

তাই এসপি’র কাছে শপথ নিয়েছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। আর মাদক ব্যবসায় জড়াবো না। কৃষি কাজ করে সম্মান নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে চাই। এ ব্যাপারে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক যোগদানের পর জোড়ালো অভিযানে আদিতমারীসহ গোটা জেলায় অনেকটাই মাদক শুন্য হয়ে পড়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অন্ধকার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। অনেক চরের মাদক ব্যবসায়ীরা এবার তরমুজ চাষাবাদে লাভবান হয়েছেন। তাই তারা মাদক ব্যবসা ছেড়ে কৃষি কাজে নিজেকে আত্ননিয়োগ করেছেন।

পিবিএ/এআইএস/আরআই

আরও পড়ুন...